Header Ads

Header ADS

Johan Cruyff lifestory/Johan Cruyff Biography

জোহানেস ক্রুইফের জিবনিঃ-Johan Cruyff lifestory/Johan Cruyff Biography


Johan Cruyff


পুরো নাম- হেনড্রিক ইয়োহানেস ক্রুইফ
জন্ম তারিখ-২৫ এপ্রিল, ১৯৪৭
জন্মস্থান- আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ড
মৃত্যুর তারিখ- ২৪ মার্চ, ২০১৬ (৬৮ বছর বয়সে)
মৃত্যুস্থান- বার্সেলোনা, স্পেন
উচ্চতা- ৫ ফিট ১১ ইঞ্চি
প্লেয়িং পজিশন- ফরোয়ার্ড, প্লে মেকার। 
ইয়ুথ ক্যারিয়ার- আয়াক্স(১৯৫৭-৬৩)
ন্যাশনাল টিম-নেদারল্যান্ড(১৯৬৬-১৯৭৭)



প্রারম্বিক জীবন


১৯৪৭ সালের ২৫ এপ্রিল ওই দিনের কথা নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম এর ক্লাব আয়াক্স আমস্টারডাম, ওই ক্লাবটির হোমগ্রাউন্ড থেকে ৫ মিনিটের দূরত্বে কর্নেলিস ক্রুইফ আর পেট্রোনিলার ঘরে জন্ম নেয় এক বিস্ময়বালক, নাম তার ইয়োহান ক্রুইফ।হানড্রিক জোহানেস ক্রুইফ এর চেয়ে
যোহান ক্রুইফ নামে বেশি পরিচিত।তার বাবার নাম হারম্যানাস কর্নেলিস ক্রুইজফ এবং তাঁর মায়ের পেট্রোনেলা বার্নার্ডা দ্রাইজার ।পরিবারটির বিনয়ী উপায় ছিল ।  তবে ক্রাইফের বাবা ফুটবলের এক অনুগামী অনুসারী ছিলেন এবং যথাসম্ভব ফুটবল খেলতে উত্সাহিত করেছিলেন।তিনি শৈশবকাল থেকেই একজন উত্সাহী ফুটবলার ছিলেন এবং তার স্কুল বন্ধুদের সাথে খেলেছেন এবং ১০ বছর বয়সে অ্যাজাক্স যুবসমাজের হয়ে খেলেছেন । তিনি ক্যাটালোনিয়ার পৃষ্ঠপোষক সন্তানের নামে নিজের তৃতীয় সন্তানের নামও রেখেছিলেন। ক্রাইফ ছিলেন ভারী ধূমপায়ী যা তার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা নিয়ে এসেছিল। তিনি একটি ওপেন হার্ট সার্জারিও করেছিলেন। যখন তাঁর বয়স মাত্র ১২ বছর তখন তার বাবা  মারা গিয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর বাবার স্মরণে ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন।তিনি যুগে যুগে পদক্ষেপে বেশ দ্রুত এগিয়ে এসেছিলেন এবং ১৯৬৫ সালে মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে তিনি নিয়মিত স্কোর করে সিনিয়র দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ক্রাইফ মৌসুমে লিগ চ্যাম্পিয়নদের শেষ হওয়ার সাথে সাথে মৌসুম ২৫ টি গোলে জিতেছে।


ব্যক্তিগত তথ্য


২ ডিসেম্বর, ১৯৬৮ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার স্ত্রীর নাম ডেনি কস্টার।জোহান ক্রুইফ একটি বিবাহিত ব্যক্তি এবং সুখী দাম্পত্য জীবনের প্রায় ৫ দশক ছিল। এই দম্পতির একসাথে তিনটি সন্তান ছিল । জর্ডি ক্রুইফ, চ্যান্টাল ক্রাইফ, সুসিলা ক্রুইফ। ক্রাইফের ছেলেও তার বাবার পথ অনুসরণ করে একজন ফুটবলার।



ক্লাব ক্যারিয়ার


(আয়াক্স আমস্টারডাম, বার্সেলোনা, লস এন্জেলস, ওয়াশিংটন ডিপ্লোমাটস, লেভান্তে, ফেয়েনর্ড)

“আমি যুদ্ধ শেষ হওয়ার খুব কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলাম আর তখন বেঁচে থাকা ছাড়া মানুষের পক্ষে অন্য কিছু চিন্তা করা অসম্ভব ছিল।”
-ইয়োহান ক্রুইফ(২০১৫ তে তার এক সাক্ষাৎকারে)


১৯৪৭ সালের ২৫ এপ্রিল ওই দিনের কথা নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম এর ক্লাব আয়াক্স আমস্টারডাম। ওই ক্লাবটির হোমগ্রাউন্ড থেকে ৫ মিনিটের দূরত্বে কর্নেলিস ক্রুইফ আর পেট্রোনিলার ঘরে জন্ম নেয় এক বিস্ময়বালক। নাম তার ইয়োহান ক্রুইফ।ফুটবল নামক যে খেলা দুনিয়াতে রয়েছে কেউ এ খেলার সেরা প্লেয়ার ,কেউ সেরা কোচ ,কেউ বা সেরা মটিভেটর কেউ আবার সেরাদের সেরা হয়, কিন্তু ক্রুইফ একাধারে সেরা প্লেয়ার, কোচ, মটিভেটর, মেন্টর, অরগনাইজার, স্পেশিয়ালিস্ট এই প্রত্যেকটায় সেরাদের সেরা ছিল।ডাচ ফুটবলের ইতিহাসে সে এক বিপ্লবের সূচনাকারী ছিল।

টোটাল ফুটবল নামক যে ফুটবলের সাথে বর্তমানে আমরা পরিচিত তা এই ক্রুইফের হাতেই পরিপূর্ন ও গুছানো রুপ পেয়েছিল। টোটাল ফুটবলের ছন্দে ছন্দে পুরো বিশ্বকে তাক লাগানো সাফল্য দেখিয়েছিল ক্রুইফ।ইয়োহান ক্রুইফ ছিল বলেই ফুটবল ক্লাব বার্সা আজ এত সফল। সে যদি তার দক্ষতা, বিচক্ষণতা, তার খেলা, তার মেধা, তার শ্রম, তার ডেডিকেশন এই বার্সাকে না দিতো তাহলে আজ হয়তো বার্সা সেভিয়া কিংবা টটেনহাম মানের একটা ক্লাব হয়ে থাকতো।আজ যে মেসি আমাদের এত এত প্রিয় ক্রুইফ তার উপস্থিত বুদ্ধি ব্যবহার না করলে আজ সে মেসি আমাদের রাইভাল কোন টিমের একজন প্লেয়ার হিসেবে খেলতো।এক কথায় বর্তমান বার্সার যে রুপ আমরা দেখি যে ছন্দের তালে বার্সা ফুটবল খেলে বার্সার সাফল্যের যে চিত্র আজ বিদ্যমান এই সবকিছুরই শুরু হয়েছিল ইয়োহান ক্রুইফের হাতে। তার রং তুলি দিয়েই সে সর্বপ্রথম বর্তমান বার্সার সাফল্যের চিত্র আঁকা শুরু করেছিল।এককথায় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় অভিভাবক ছিল ইয়োহান ক্রুইফ।
Johan Cruyff

নেদারল্যান্ডের ক্লাব আয়াক্সের ৭০ দশকের সাফল্যের যে গল্প আমরা শুনি সেটাও এই ক্রুইফ লিখেছিল।ক্রুইফ মানুষটাই এমন ছিল যে তার জীবনের ৯০ ভাগ সময় সে ফুটবলকে উৎসর্গ করে দিয়েছিল।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে ফুটবল থেকে আলাদা করে ভাবতে পারে নি এই মানুষটা।কিন্তু ভাগ্য নামক দুই অক্ষরের জিনিসটা এত বেশিই নিষ্ঠুর হয় যে এই মানুষটাও বিশ্বকাপ ট্রফি ছুঁয়ে দেখা থেকে মাত্র এককদম দূরত্বে এসেও সে ট্রফিটা ছুঁতে পারে নি। মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় বিশ্বকাপ ট্রফিটা হয়তো বড় অভাগা নাহলে অভিশপ্ত।ফুটবল নামক যে ফ্যাক্টরী রয়েছে সে ফ্যাক্টরীর শ্রমিক থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী, উৎপাদনকারী, ব্যবস্থাপক, বন্টনকারী, তদারককারী প্রতিটা ক্ষেত্রেই সমান দক্ষ ছিলেন তিনি।ইউরোপিয়ান ফুটবলে সবই প্রফেশনাল কিন্তু এই মানুষটা ফুটবলকে মনে প্রানে ভালবাসতেন তাই ফুটবল নিয়ে কাজ করতেন। ফুটবলকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে সারাজীবন কাজ করেছেন।ক্রুইফের বাবা তাকে ফুটবলার বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন আর তার বাবাই তাকে ফুটবল খেলার জন্য প্রভাবিত করতেন।

ক্রুইফের বয়স যখন ১২ বছর তখন হার্ট অ্যাটাকে তার বাবার মৃত্যু হয়।কিন্তু এতে বিন্দুমাত্রও ভেঙ্গে পড়ে নি ক্রুইফ কিংবা তার লক্ষ্য থেকে বিচলিত হয়নি । সে শোককে শক্তিতে পরিনত করেছিল তার বাবার স্বপ্ন পূরনের জন্য। ক্রুইফ নেদারল্যান্ড জাতীয় দলকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল ।যার ফলে সে না থাকার পরও ৭৮ এর বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ড ২য় বারের মতো ফাইনাল খেলেছিল।আয়াক্সের সাফল্যেরও মূল নায়ক ছিল ক্রুইফ। সত্তরের দশককে আয়াক্সের সময় বলা হয়। তার অন্যতম কারিগর ক্রুইফ ওই সময়টাকে টোটাল ফুটবলের গোল্ডেন সময় বলা হয়।

শুধু আয়াক্স না বার্সারও সাফল্যের সিড়িতে আরোহন শুরু হয়েছিল ক্রুইফের হাত ধরেই। রিয়ালের একক রাজত্ব ক্রুইফের হাতেই ধ্বংস হয়েছিল। আজকের রিয়াল বার্সার দ্বারেকাছেও আসতে পারে না সাফল্যের দিক দিয়ে তার অন্যতম প্রধান কারন ছিল ইয়োহান ক্রুইফ।ক্রুইফ তার মেটড দিয়ে ইয়ুথ একাডেমীর উপর বেশি জোর দিয়েছিল। যার ফলস্বরুপ আজ আয়াক্সের এত শক্তিশালী একটা ইয়ুথ একাডেমী আছে।বার্সেলোনার আছে লা মাসিয়া।এছাড়াও আর্সেনাল, চেলসি, ম্যানইউ, ক্রুইফের ফর্মুলা এপ্লাই করে তাদের ইয়ুথ একাডেমী ডেভেলপ করেছিল।  

পেপ গার্দিওলা, আর্সেন ওয়েঙ্গার, রাইকার্ড, ক্রুইফের মেথড ফলো করে তাদের কোচিং ক্যারিয়ারে সাফল্য পেয়েছিল।ক্রুইফকে টোটাল ফুটবলের পাওয়ার হাউস বলা হয়।“ক্রুইফ নামের একজন বান্দা যদি বার্সায় না আসতো তাহলে আমরা আজকের বার্সেলোনা দেখতাম না। এই বার্সার ঘরোয়া প্লেয়ার নিয়ে একক রাজত্বের এই চিত্রের দেখা মিলতো না যদি ক্রুইফ বার্সায় না আসতো!!



আয়াক্স আমস্টারডাম


ক্রুইফ তার দশম জন্মদিনে আয়াক্স ইয়ুথ একাডেমীতে যোগ দিয়েছিল। ক্রুইফের বাসা ছিল আয়াক্স স্টেডিয়াম থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্ব । একদিন ক্রুইফ আর বন্ধুরা ফুটবল খেলতে ছিল তখনকার আয়াক্স ফুটবল ক্লাবের ইয়ুথ কোচ ভ্যান ডার ভিন ক্রুইফকে খেলতে দেখেছিল আর সাথেই সাথেই কোন ফরমাল ট্রায়াল ছাড়া সে ক্রুইফকে ইয়ুথ একাডেমীতে নিয়েছিল। ১৯৬৪ সালের ১৫ ই নভেম্বর আয়াক্স মূল টিমের হয়ে ডেবিউ হয় ক্রুইফের। শুরু হয় ফুটবলের নতুন একদিকের যাত্রা । ১৯৬৬ সাল থেকে আয়াক্সের মূল টিমের নিয়মিত একাদশে জায়গা করে নেন ক্রুইফ।

১৯৬৫ সালে ৭ ম্যাচে ৮ গোল করে ক্রুইফ । ১৯৬৬/৬৭ মৌসুমের উদ্বোধনী ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে ক্রুইফ সে ম্যাচে ৬-১ গোলে জয় পায় আয়াক্স । ৪ দিন পরে লিগ কাপের ম্যাচে আবারো ৪ গোল করে ক্রুইফ ৭-০ গোলের জয় পায় আয়াক্স । ওই মৌসুমে ২৩ ম্যাচে ২৫ গোল করে ক্রুইফ আর প্রথমবারের মতো লিগ শিরোপা আর লিগ কাপ জিতে। আয়াক্সেরর হয়ে এটাই ছিল ক্রুইফের প্রথম ট্রফি এবং প্রথম ডাবল। এইখান থেকেই টোটাল ফুটবলের ইতিহাস রচনার দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নেই ক্রুইফ।

১৯৬৭/৬৮ মৌসুমে আবারো লিগ শিরোপা জিতে আয়াক্স । ক্রুইফ ওই মৌসুমে ৩৩ গোল করে লিগা এরেডিভিসের সর্ব্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেন । সেই সাথে টানা ২য় বারের মতো ডাচ ফুটবলার অফ দা ইয়ার নির্বাচিত হন।২৮ মে ১৯৬৯ সালে ক্রুইফ আয়াক্সের হয়ে তার প্রথম ইউরোপিয়ান কাপের(বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগ) ফাইনাল খেলে ওই ফাইনালটা আয়াক্স এসি মিলানের কাছে ৪-১ গোলে হেরে যায়।  ১৯৭০ এ আবারো লিগা এরেডিভিস আর লিগ কাপ ডাবল একত্রে জিতে আয়াক্স। ১৯৭০ এ লং টাইমের জন্য প্রথমবারের মতো ইঞ্জুরিতে পড়ে ক্রুইফ। ১৯৭০ এর ৩০ অক্টোবর সে কামব্যাক করে।
Johan Cruyff

১৯৭০ এর ২৯ নভেম্বর ক্রুইফ একাই ৬ গোল করে ওই ম্যাচে ৮-১ গোলের জয় পাই আয়াক্স। ১৯৭১ সালের ২ ই জুন ২য় বারের মতো ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে উঠে ক্রুইফের আয়াক্স ওই ম্যাচে পানাটিয়াকোসকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান কাপ জিতে। ওই মৌসুমে লিগ কাপ আর লিগসহ ট্রেবলও জিতে আয়াক্স। এটুকুই না ওই বছর ডাচ ফুটবলার অফ দা ইয়ার হন। ইউরোপিয়ান ফুটবলার অফ দা ইয়ার এবং ফিফা ওয়ার্ল্ড ফুটবলার অফ দা ইয়ার ব্যালন ডি অর জিতেন ক্রুইফ। 

১৯৭২ সালে ইন্টার মিলানকে ২-০ গোলে হারিয়ে টানা ২য় বারের মতো ইউরোপিয়ান কাপ জিতে আয়াক্স গোল দুটোই করেন ক্রুইফ । লিগে ২৫ গোল করে ওই মৌসুমের সেরা গোলদাতা হয় ক্রুইফ এবং আরো একবার লিগ চ্যাম্পিয়ন আয়াক্স । ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে আর্জেন্টাইন ক্লাব ইন্ডিপেন্ডিয়েন্টকে ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আয়াক্স এবং ইউরোপিয়ান সুপার কাপে রেন্জার্সকে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৩ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আয়াক্স।১৯৭৩ সালে য়্যুভেন্টাসকে ১-০ গোলে হারিয়ে টানা ৩য় বারের মতো ইউরোপিয়ান কাপ জিতে আয়াক্স । ওইটাই আয়াক্সের হয়ে ক্রুইফের শেষ মৌসুম।

৯ বছরের আয়াক্স ক্যারিয়ারে ৮ টা লিগ শিরোপা, ৩ টা ইউরোপিয়ান কাপ আয়াক্সকে জিতিয়েছিল ক্রুইফ। যেটাকে মিরাকেল পিরিয়ডও বলা হয় আয়াক্সের।  এক কথায় আয়াক্সের সেই সময়কার কোচ রাইনাস মাইকেল আর ক্রুইফ ম্যাজিকালভাবে টোটাল ফুটবলকে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল । আর সেই সময়টা আয়াক্স আর বিশ্বের ফুটবলে টোটাল ফুটবলের গোল্ডেন এরা নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে । ক্রুইফ আয়াক্স ছাড়ার পরই আয়াক্সের সোনালী সাফল্যের পতন শুরু হয়েছিল।


ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা 


[ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা- ১৪ বছর পর লা লিগা শিরোপা পুনরুদ্ধারের গল্প (১৯৭৩-১৯৭৮)]
১৯ আগষ্ট, ১৯৭৩ সালে ৬ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বার্সায় যোগ দেয় ক্রুইফ শুরু হয় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার নতুন এক উড়ন্ত সূচনা। ক্রুইফ বার্সার একজন প্লেয়ারই ছিল না কেবল সবচেয়ে বড় কথা সে আমার আপনার মতো একজন বার্সা ফ্যান ছিল। সে তার পুত্রের নাম রেখেছিল জর্দি,যেটা কাতলানদের সবচেয়ে প্রিয় নাম । ১৯৬০ এর পর প্রথমবারের মতো সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের বিপক্ষে ৫-০ গোলের জয় পাই ক্রুইফের বার্সেলোনা। কাতালান নিউজপেপারগুলোর তখনকার শিরোনাম ছিল পলিটিশিয়ানের চেয়ে ৯০ মিনিটের ক্রুইফ বেশি প্রিয় কাতালানের মানুষের । ১৯৭৪ এ সে আবারো ইউরোপিয়ান ফুটবলার অফ দা ইয়ার নির্বাচিত হয়।সে বার্সাকে ১৪ বছর পর ১৯৭৩/৭৪ মৌসুমে লা লিগা শিরোপা পুনরুদ্ধার করে দেয় যেটা এর আগে অনেকেই পারে নাই। বার্সার হয়ে ক্রুইফের সবচেয়ে ফেমাস গোলটা হলো এটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে যেটা সে মাটি থেকে মাথা সমান উচ্চতায় বডিকে উপরে উঠিয়ে কিক নিয়েছিলেন বলে। ১৯৭৮ এ বার্সাকে কোপা দেল রে জিতিয়ে প্লেয়ার হিসেবে বার্সা ক্যারিয়ারের ইতি টানে ক্রুইফ।


অন্যান্য ক্লাব (১৯৭৮-১৯৮২)


১৯৭৮ সালে ৩২ বছর বয়সে ক্রুইফ এমএলএসের ক্লাব লস অ্যাঞ্জেলস এটটেকসে যোগ দেয়। ওই ক্লাবে তিনবছর খেলার পর ১৯৮১ তে সে আবারো লা লিগায় ফিরে আসে লেভান্তের হয়ে । লেভান্তে তখন সেকেন্ড ডিভিশনে ছিল। ওই মৌসুমে ১০ ম্যাচে ২ গোল করে ক্রুইফ আর লেভান্তে ফাস্ট ডিভিশনে কোয়ালিফাই নিশ্চিত করে।

আয়াক্স- আয়াক্সে ফিরে আসা (১৯৮২)


১৯৮২ সালে আবারো তার পুরনো এবং প্রথম ক্লাব আয়াক্সে ফিরে আসে ক্রুইফ সেখানে আয়াক্সের হয়ে আবারো লিগ শিরোপা আর লিগ কাপ জিতে ক্রুইফ। তারপর আয়াক্স আর তার সাথে চুক্তি নবায়ন করেনি।

ফেয়েনর্ড- ফাইনাল সিজন(১৯৮৩)


১৯৮৩ তে ফেয়েনর্ডে যোগ দেয় ক্রুইফ আর নামের পাশে আরো একটা লিগ শিরোপা যোগ করে অবসরে যায়।



ন্যাশনাল টিম(১৯৬৬-৭৭)

Johan Cruyff

১৯৬৬ সালে নেদারল্যান্ড ন্যাশনাল টিমের হয়ে অভিষেক হয় ক্রুইফের। সে নেদারল্যান্ডের টোটাল ফুটবলকে নতুন এক রুপ দিতে শুরু করেছিল । ১৯৬৬ থেকেই, ১৯৬৮ সালে চেক স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ালিফাইং ম্যাচে প্রথম ডাচ প্লেয়ার হিসেবে লাল কার্ড দেখে ক্রুইফ। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ৪-০, ব্রাজিলকে ২-০, ইস্ট জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে নেদারল্যান্ড। আর্জেটিনার বিপক্ষে ২ গোল আর ব্রাজিলের বিপক্ষে ১ গোল করে ক্রুইফ। আনফর্চুনেটলি ফাইনালে ওয়েস্ট জার্মানির কাছে ২-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ শিরোপা আর ছুঁয়ে দেখা হয়নি ফুটবল বিশ্বের এই বরপুত্রের। ১৯৭৭ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর নেই ক্রুইফ, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৪৮ ম্যাচে ৩৩ গোল করে ক্রুইফ।



কোচিং ক্যারিয়ার

আয়াক্স(১৯৮৫-১৯৮৮)


প্লেয়ার হিসেবে অবসর নেওয়ার পর সর্বপ্রথম আয়াক্সের বি টিমের কোচ হিসেবে কাজ শুরু করে ক্রুইফ। সে তার মেন্টর রাইনাসের মেটড ফলো করা শুরু করে ১৯৮৬ তে সে আয়াক্স মূল টিমের কোচ হয় আর সে তার কোচিং এ অল্পের জন্য লিগ শিরোপা মিস করলেও লিগ কাপ জিতে আয়াক্স কিন্তু ক্রুইফ তার ফিলোসপি দ্বারা আয়াক্সে একটি ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিল যেটির মাধ্যমে পরবর্তীতে ১৯৯৫ তে আয়াক্স আবারো চ্যাম্পিয়নস লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, ওই টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার পর ক্লাব তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ক্রুইফকে দিয়েছিল।


রিটার্ন টু ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা

বার্সার নিজস্ব ফুটবল একাডেমী ও ড্রিম টিম তৈরী(১৯৮৮-১৯৯৬)

১৯৮৮ তে কোচ হিসেবে বার্সায় ফিরে আসে ক্রুইফ।ফিরে আসার পর বার্সায় তার প্রথম লক্ষ্য ছিল বার্সার একাডেমী ডেভেলপ করা । আজকের যে লা মাসিয়া আমাদের মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা, পুয়োল, বুসি আরো অনেকে এই প্লেয়ারগুলো দিয়েছে সে লা মাসিয়ার মূল ভিত্তি এই ক্রুইফের হাতেই তৈরী হয়েছিল। তার ২য় লক্ষ্য ছিল ড্রিম টিম তৈরী করা । চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্য বার্সার অধোরা চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জেতার স্বপ্ন। ক্রুইফ তার ড্রিম টিমে কতিপয় প্লেয়ারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল – শিকি বেগ্রিস্টাইন, অ্যান্ডনি গইকয়েৎশিয়া, রোনাল্ড কোয়েম্যান, মাইকেল লাউড্রাপ, রোমারিও, জিওর্জি হ্যাগি, হৃস্ট স্টইচকভ । এই টিমটা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত টানা চারটা লা লিগা শিরোপা জিতেছিলো।

সেই সাথে ১৯৯২ সালে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে জিতেছিল প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ। সেই সাথে দুইটা কোপা দেল রে শিরোপা, দুইটা সুপারকোপা এসপানা আর একটা উয়েফা সুপার কাপ!!ক্রুইফ কেবল বার্সার ট্রফি ক্যাবিনেট কিংবা রেকর্ড বৃদ্ধি করে নি,সে বৃদ্ধি করেছিল বার্সার উইনিং এভেলিটি। সে বার্সাকে দিয়েছিল নতুন কিছু করে দেখানোর সামর্থ্য, শিখিয়েছিল কিভাবে ম্যাচ উইনিং বাজি খেলতে হয়, শিখিয়েছিল কিভাবে ঘরের ছেলে দিয়ে ঘর গুছিয়ে নিতে হয়। তারই ফলস্বরুপ ফন গাল চেয়েছিল লা মাসিয়ার এগারো জন নিয়ে টিম বানিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে । 

২০০৯ এ বার্সার চ্যাম্পিয়নস লিগ উইনিং একাদশে ফাইনালে খেলেছিল ৯ জন লা মাসিয়ার প্রোডাক্ট। এই সবকিছু সম্ভব হয়েছিল ১৯৮৮ সালে বসে ক্রুইফ যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কৌশল এপ্লাই করেছিল সেটার জন্য । পেপ গার্দিওলা, জাভি, লিওনেল মেসি এই হীরার টুকরা গুলো ক্রুইফের হাতেই আবিষ্কৃত হয়েছিল কেমনে তা আরো পরে আলোচনা করবো।১৯৯৬ সালে অফিসিয়ালি বার্সার কোচের পদ থেকে সরে দাড়ায় ক্রুইফ।



ট্যাকনিকাল এডভাইসর অফ লাপোর্তো

ক্রুইফ হার্ট অ্যাটাক করার পর ডাক্তার তাকে ফুটবল কোচিং ছেড়ে দিতে বলে । কারন উত্তেজনাপূর্ন ম্যাচে যে পরিমান মেন্টাল প্রেসার নিতে হয় তা নেওয়ার মতো ক্ষমতা আর ক্রুইফের ছিল না এতে তার মৃত্যুও হতে পারতো। কিন্তু তাতে কি ফুটবলের প্রতি ক্রুইফের ভালবাসা বা ফুটবল নিয়ে তার কাজ করার যে ইচ্ছা ছিল সেটা তো আর কমে যায় নি। সে তখন বার্সার প্রেসিডেন্ট লাপোর্তের আনঅফিসিয়াল ট্যাকনিকাল এডভাইসর হিসেবে কাজ করা শুরু করে। একটা মজার ব্যাপার হলো ক্রুইফের দূরদর্শীতা এতো বেশিই সূক্ষ্ম ছিল যে সে বার্সার ফিউচার নিয়ে যতগুলো কাজ করেছিল আর সেগুলোর যে রেজাল্ট নির্ধারন করে দিয়েছিল সঠিক সময়ে বার্সা প্রত্যেকটা রেজাল্ট ক্রুইফের অনুমান অনুযায়ী অর্জন করেছি ।  

সে বার্সার অফিসিয়াল কোন পদে ছিল না কিন্তু সাবেক বার্সা প্রেসিডেন্ট লাপোর্তে ক্রুইফের প্রত্যেকটা এডভাইস মেনে চলতো। ২০০৩ এ ক্রুইফই বলেছিল রাইকার্ডকে বার্সার কোচ হিসেবে নিযুক্ত করতে সে এটাও বলেছিল রাইকার্ড বার্সাকে ২য় বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর সামর্থ্য রাখে। রাইকার্ডের পর বার্সা ম্যানেজমেন্ট মরিনহোকে কোচ হিসেবে নিয়োগ করতে চেয়েছিল ।  তখন ক্রুইফই বলেছিল মরিনহোর চেয়ে গার্দিওলা বেস্ট হবে আর সবাই তখন গার্দিওলার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আর ক্রুইফ তখন প্রথমবারের মতো মিডিয়ার সামনে মুখ খুলেছিল –

“বার্সার মতো টিম ম্যানেজ করার জন্য যা প্রয়োজন তা হলো মানসিক শক্তি আর মিডিয়াকে হ্যান্ডেল করার সামর্থ্য কারন এ দুইটাই সবসময় আপনার বিপক্ষে কাজ করে, আর এগুলো খুব ভালোভাবে সেই করতে পারবে যে বার্সাকে খুব কাছ থেকে চিনে, আমি পেপকে খুব কাছ থেকে দেখেছি সে এটা পারবে ”
-ইয়োহান ক্রুইফ।

বার্সা যখন মেসি সাইনিং এ রাজি ছিল না তখন ক্রুইফ একাই চেয়েছিল মেসিকে বার্সায় আনতে আর সে সফলভাবে বার্সা ম্যানেজমেন্টকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল । তখনই তারা মেসির চিকিৎসার দায়ভার বহন করেছিল আর আজকের মেসি আমাদের সামনে।

“এই বাচ্চাটা ট্যালেন্টেড না গড গিফ্টেড । ইউরোপের ফুটবল বাজারে এমন অনেক ক্লাব আছে যারা তার চিকিৎসার দায়ভার অনায়াসে বহন করবে এটা নিয়ে তার চিন্তা করতে হবে না ।  কিন্তু আমার পয়েন্ট হলো আজ যদি আমরা এই বাচ্চাটাকে সাইন না করি কাল সে আমাদের রাইভাল যে কোন এক টিমের হয়ে আমাদের বিপক্ষে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে আর লিজেন্ড হওয়ার মতো সব গুন এই বাচ্চাটার মধ্যে আছে । আমি লিওকে যে কোন মূল্যে বার্সায় চাচ্ছি”
-ইয়োহান ক্রুইফ।

পরবর্তী ৪/৫ পাস পর ফলাফল কি হবে সেটা চিন্তা করে মাঠে প্রত্যেকটা পাস সম্পন্ন করতো জাভি আর জাভির এই পাসিং গেমের মটিভেটর ক্রিয়েটর ছিল ক্রুইফ।২০১০ এর ২৬ মার্চ বার্সায় তার সকল কন্ট্রিবিউশনের জন্য তাকে অনারারি প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড সম্মাননা প্রদান করা হয়।


ট্যাকনিকাল এডভাইসার অফ আয়াক্স


২০০৮ এ আয়াক্সের ট্যাকনিকাল এডভাইসর হিসেবে আবারো ফিরে আসে ক্রুইফ কিন্তু সে সেখানে দেখে যে দশ বছর ক্লাবটা মিস ম্যানেজমেন্টে পরিচালিত হয়েছে ক্রুইফ তার ফিলোসপি দিয়ে ক্লাবকে আবারো আগের পজিশনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা প্রনয়ন করে কিন্তু তখনকার আয়াক্স কোচ মার্কো ভ্যান বাস্টেন আর আয়াক্স বোর্ড ক্রুইফের সাথে দ্বিমত পোষন করে । ২০১২ এর ১০ এপ্রিল রিজাইন করে ক্রুইফ।২০১২ তে ম্যাক্সিকান ক্লাব গুয়েডালাজার ট্যাকনিকাল এডভাইসর হিসেবে কাজ করে ক্রুইফ।

কাতালুনিয়া ন্যাশনাল টিম(২০০৯-২০১৩)


২০০৯ থেকে কাতালান ন্যাশনাল টিমের কোচ হিসেবে অফিসিয়ালি কাজ শুরু করে ক্রুইফ তার অধীনে আর্জেন্টিনারর বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয় পেয়েছিল কাতালানরা।


ক্রুইফের প্লেয়িং স্টাইল- টোটাল ফুটবলার, টোটাল ফুটবলের কোচ


৩-৪-৩ ছিল ক্রুইফের টোটাল ফুটবলের ফরম্যাশন,
টোটাল ফুটবল আসলে কি?

টোটাল ফুটবল হলো এমন একটি প্লেয়িং স্টাইল যেখানে প্লেয়ারদের নির্দিষ্ট কোন পজিশন বা রোল থাকে না। সে তার পজিশন রোটেট করতে থাকে আরকেজন এসে তার পজিশন রিপ্লেস করে আবার সে আরেকজনের পজিশন রিপ্লেস করে এভাবে বল নিয়ে ১১ জন পুরো মাঠেই খেলে।ক্রুইফের তখনকার টিমমেটদের মতে ক্রুইফ সবসময় তাদের বোঝাতো কেমনে বল পাস করবে কেমনে দৌড়াবে, কেমনে পজিশন একজনেরটা আরেকজন রোটেট করে স্পেস তৈরী করবে, টোটাল ফুটবল তখনকার গতিময় ফুটবল হলেও এটার মধ্যে শৈল্পিক ছোয়াও ছিল।

“এক কথায় টোটাল ফুটবল হলো আরেকজনের স্পেস তৈরী করা আর নিজের জন্য নতুন স্পেস খুঁজে বের করা ”

-ইয়োহান ক্রুইফ।

“আমি সে যুগের প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম যেটা প্রমান করেছিল ফুটবল কতটা আকর্ষনীয়, সফল আর মজার একটা গেম, আমরা মানুষকে দেখাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে ফুটবলার হওয়া কতটা মজার ”

-ইয়োহান ক্রুইফ

ক্রুইফ তার ট্যাকটিক্সে ৩-৪-৩ ফরম্যাশন সর্বাধিক ব্যবহার করতো । ক্রুইফের একটা পলিসি ছিল সে তার খেলোয়াড়ি জীবনে কোনদিনও স্কিল শো অফ করেনি । কোচিং ক্যারিয়ারেও সে তার প্লেয়ারদের একটা কথা প্রায় বলতো – ” নিজের প্রয়োজনীয় খেলা দলের জন্য প্রয়োজনীয় খেলা এই দুইটা মাঠে খেলে আসো তাতেই তুমি সেরা এর বেশি কিছু প্রদর্শন করা ওয়েস্ট অফ টাইম এন্ড এনার্জি”

ক্রুইফ কেবল ম্যাচ জিতে আসতো না সে ম্যাচটাকে সঠিক উপায়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে খেলে আসতো । সে তার প্লেয়ারদের সাথে সবসময় ম্যাচের আকর্ষন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করতো তার মত ছিল ম্যাচে খেলে জিতে আসার মধ্যে কোন মজা নেই ম্যাচটাকে আকর্ষনীয় করে তোলায় ফুটবলের মূলমন্ত্র । ক্রুইফ সবসময় রুলসের ব্যাপারে খুব বেশি স্ট্রীক্ট ছিল তার কোচিং ক্যারিয়ারে । সে তার নিজস্ব ছন্দে নিজস্ব গতিতে নিজস্ব স্টাইলে প্লেয়ারদের খেলাতে পছন্দ করতো । ক্রুইফ স্টার প্লেয়ার সাইন করানোর চেয়ে নতুন স্টার তৈরী করতে বেশি পছন্দ করতো!  

১৯৯২ সালের কথা কাউকে কিছু না জানিয়ে একদিন লা মাসিয়ার মাঠে হাজির ক্রুইফ তখন বার্সা বি টিম বনাম জুভেনিল এ টিমের ম্যাচ চলতে ছিল । ডাগআউটে বসে ক্রুইফ প্রথম হাফ দেখলো দেখার পর সে বি টিমের কোচকে বললো লেফ্ট সাইডে যে প্লেয়ারটা খেলছে তাকে সেন্টারে আনতে বি টিমের কোচ বললো সে তো লেফ্টের প্লেয়ার ক্রুইফ বললো সে লেফ্টে সেরা কিন্তু সেন্টারে সে সেরাদের সেরা হবে পরবর্তী বছরই তাকে বার্সার মূল টিমে প্রমোট করলো । ক্রুইফ জানেন সে প্লেয়ারটা কে?
চিন্তা করেন তো কে হতে পারে?

★ আমাদের পেপ গার্দিওলা।


ক্রুইফ তার টিমকে ঝুঁকি বনাম প্রত্যাশা এ দুইয়ের মধ্যখানে ফুটবল খেলাতো। ঝুঁকি অপজিশনের কাছে বল পসেশন হারানোর কাউন্টারে ডিফেন্স ভেঙ্গে যাওয়ার আর প্রত্যাশা বল নিয়ে পুরো মাঠে স্পেস তৈরী করে অপজিশনের ডিফেন্স ভেঙ্গে দেওয়ার।

“উইনিং নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু নিজস্ব একটা ইউনিক স্টাইল থাকা যেটা মানুষ কপি করবে প্রশংসা করবে এটা ফুটবলের গ্রেটেস্ট গিফ্ট ”

-ইয়োহান ক্রুইফ।


প্লেয়ার ও কোচ হিসেবে তার অর্জনসমূহ

#আয়াক্সের হয়ে-



  • এরেডিভিসি: ১৯৬৫-৬৬, ১৯৬৬-৬৭, ১৯৬৭-৬৮,
                                  ১৯৬৯-৭০,১৯৭১-৭২, ১৯৭২-৭৩, ১৯৮১-৮২,
                                  ১৯৮২-৮৩, 

  • কেএনভিবি কাপ: ১৯৬৬-৬৭, ১৯৬৯-৭০, ১৯৭০-৭১,১৯৭১-৭২, ১৯৮২-৮৩, 
  • ইউরোপীয় কাপ:  ১৯৭০-৭১, ১৯৭১-৭২, ১৯৭২-৭৩; 
  • রানার আপ: ১৯৬৮-৬৯ 
  • উয়েফা সুপার কাপ: ১৯৭২ 
  • আন্তঃমহাদেশীয় কাপ: ১৯৭২ 

#বার্সেলোনার হয়ে-


  • লা লিগা: ১৯৭৩-৭৪ 
  • কোপা দেল রে: ১৯৭৭-৭৮ 

#ফেয়েনর্ডের হয়ে:


  • এরেডিভিসি: ১৯৮৩-৮৪ 
  • কেএনভিবি কাপ : ১৯৮৩-৮৪ 

#জাতীয় দলের হয়ে-


  • ফিফা বিশ্বকাপ রানার আপ:১৯৭৪ 
  • উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ তৃতীয় স্থান:১৯৭৬ 


কোচ হিসেবে অর্জন-


আয়াক্সের হয়ে-

  • এরেডিভিসি রানার-আপ: ১৯৮৬-৮৭ 
  • কেএনভিবি কাপ: ১৯৮৫-৮৬ ,১৯৮৬-৮৭ 
  • উয়েফা কাপ বিজয়ীদের ’কাপ: ১৯৮৬-৮৭ 

বার্সেলোনার হয়ে-



  • লা লিগা: ১৯৯০-৯১ , ১৯৯১-৯২, ১৯৯২-৯৩ ,১৯৯৩-৯৪  
  • রানার আপ: ১৯৮৮-৮৯ 
  • ইউরোপীয় কাপ / উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ:১৯৯১-৯২ ; 
  • রানার আপ: ১৯৯৩-৯৪ 
  • উয়েফা কাপ বিজয়ীদের ’কাপ: ১৯৮৮-৮৯ ; 
  • রানার আপ:১৯৯০-৯১ 
  • কোপা দেল রে: ১৯৮৯-৯০
  • উয়েফা সুপার কাপ: ১৯৯২ 
  • সুপারকোপা দে এস্পেসা: ১৯৯১,১৯৯২,১৯৯৪ 


ব্যক্তিগত অর্জনসমূহ-



  • বছরের সেরা ডাচ ফুটবলার:১৯৬৮ , ১৯৭২ ,১৯৮৪ 
  • ব্যালন ডি’অর: ১৯৭১,১৯৭৩,১৯৭৪ 
  • তৃতীয় স্থান:১৯৭৫ 
  • বর্ষসেরা ডাচ ক্রীড়াবিদ: ১৯৭৩,১৯৭৪ 
  • ফিফা বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল: ১৯৭৪ 
  • ফিফা বিশ্বকাপ অল স্টার দল: ১৯৭৪ 
  • ডন বালান পুরষ্কার: ১৯৭৭,১৯৭৮ 
  • উত্তর আমেরিকান সকার লীগ এমভিপি: ১৯৭৯ 
  • ফিফা বিশ্বকাপ সর্বকালের দল: ১৯৯৪ 
  • ফিফা বিশ্বকাপ স্বপ্নের দল: ২০০২ 
  • বিশ শতকের বিশ্ব দল 
  • ফিফা 100
  • ওয়ার্ল্ড সকারের সর্বকালের সেরা একাদশ: ২০১৩ 
  • ওয়ার্ল্ড সকারের বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়: নং
  • ফ্রান্স ফুটবলের সেঞ্চুরির খেলোয়াড়: নং ৩ 
  • শতাব্দীর আইএফএফএইচএস ইউরোপিয়ান প্লেয়ার: ১ 
  • শতাব্দীর আইএফএফএইচএস ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার:২ 
  • বছরের সেরা ওয়ার্ল্ড সকার অ্যাওয়ার্ডস পরিচালক: ১৯৮৭ 
  • বছরের সেরা কোচের জন্য ডন বালান পুরষ্কার:১৯৯১,১৯৯২ 



ক্রুইফকে নিয়ে কিছু উক্তি ও ক্রুইফের কিছু উক্তি-


“ফুটবলার হিসেবে সে ফুটবলকে আর্ট হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, বর্তমান বার্সা ক্রুইফের সাথেই শুরু হয়েছিল সে বার্সার বর্তমান পরিচয়ের অনুভূতি”

-লাপোর্তে(বার্সার সাবেক প্রেসিডেন্ট)

“বর্তমান বার্সার জন্ম কিছুদিন আগে হয়নি, বর্তমান বার্সার জন্ম হয়েছিল ৯০ এর দশকেই, ক্রুইফ যে সফলতার বীজ বুনেছিল সেটা কেবল ফল দেওয়া শুরু করেছে কিছুদিন আগে”

-ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান

“ক্রুইফ বার্সায় নিজস্ব ফিলোসপি স্থাপন করেছিলো নিজস্ব পদ্ধতিতে, সে বার্সার ডিএনএকে জন্ম দিয়েছিল”

-জাভি

ক্রুইফ নিজেই বলেছিলেন:

“আমার গোলকিপার হলো আমার প্রথম অ্যাটাকার আর আমার স্ট্রাইকার হলো আমার প্রথম ডিফেন্ডার”

“প্রত্যেক ট্রেইনার মুভমেন্ট সম্পর্কে বলে বেশি দৌড়াও আমি বলি না, ফুটবল মাথা দিয়ে খেলতে হয় শক্তি দিয়ে না তোমার সঠিক টাইমে সঠিক স্পেসে উপস্থিত থাকাটা জরুরি এর চেয়ে বেশি দ্রুত বা স্লো না ”

“কোয়ালিটি ছাড়া রেজাল্ট বোরিং রেজাল্ট ছাড়া কোয়ালিটি উদ্দেশ্যহীন।”


মৃত্যু

২০১৫ সালের অক্টোবরে ক্যান্সার আক্রান্ত হয় ক্রুইফ, ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ বার্সেলোনায় সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে, তার মৃত্যুতে ফুটবল কেঁদেছিল, বার্সা হারিয়ে ফেলে তাদের সবচেয়ে বড় অভিভাবককে।

“সুন্দর ফুটবলকে আরো বেশি সুন্দর বানিয়েছিল ক্রুইফ যেটা হিস্টোরিতে আর কেউ পারেনি আজ আমরা তাকে হারালাম”

-গ্যারি লিনেকার।

“ক্রুইফ আমার ছোটবলার আইডল, আমার বন্ধু সে ফুটবলের বন্ধু আজ গোটা ফুটবল তাকে হারালো”

-মিশেল প্লাতিনি।


ইয়োহান ক্রুইফ অন্যান্য তথ্য


  • ক্রুইফ ফুটবলের পাশাপাশি ব্যাসবলেও সমান পারদর্শী ছিল সে তার স্কুল টিমের সেরা ব্যাসবল প্লেয়ার ছিল ১৬ বছর বয়সে ফুটবলে মনোযোগ দেওয়ার জন্য সে ব্যাসবল ছেড়ে দেয়।

  • ক্রুইফের একটা মুভ ক্রুইফ টার্ন নামে পরিচিত যেটা সে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে করেছিল আয়াক্সে ক্রুইফকে মিরাকেল বয়ও ডাকা হয়।

  • স্টিফানো, পেলে, ম্যারাডোনার পর চতুর্থ নাম হিসেবে ক্রুইফের নাম আসে লিজেন্ডের কাতারে ১৯৯৯ সালে সমর্থকদের ভোটে।

  • ক্রুইফ বার্সার হয়ে এটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে যে গোলটা করেছিল সেটা ফ্যানটম গোল নামেও পরিচিত।

  • ক্রুইফের টোটাল ফুটবলের আপডেটেড ভার্সন হলো বর্তমান টিকিটাকা আর লুচোর কাউন্টার প্রেসিং ফুটবল।

  • লা মাসিয়ার যে ইয়ুথ প্লেয়ার বাছাই আর প্রমোট করার সিস্টেম রয়েছে সেটা তৈরী করেছিল ক্রুইফ।

  • ক্রুইফ ফুটবল নিয়ে নিত্যনতুন ফিলোসপি তৈরী করতো প্রতিনিয়ত।

  • সে রাইটারও ছিল ফুটবল নিয়ে কাতালান আর ডাচ ভাষায় প্রকাশিত ক্রুইফের চারটি বই আছে।

  • ২০০৮-১২ পর্যন্ত বার্সা যে সফল সময় পার করেছিল তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ক্রুইফের।

  • ক্রুইফকে তার আইডল মনে করে আর্সেন ওয়েঙ্গার ও ইরিক কানটোনা।

  • ক্রুইফের যে উক্তি ছিল গোলকিপার নিয়ে তারই প্রতিফলন তিনি ঘটিয়েছিলেন লা মাসিয়ায় যার ফল ছিল ভিক্টর ভালদেস।

  • নেদারল্যান্ডে ক্রুইফের নামে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট রয়েছে ইয়োহান ক্রুইফ সিল্ড।

  • ইয়োহান ক্রুইফের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেটি বিশ্বব্যাপী ফুটবল কোচ ও প্রফেশনাল প্লেয়ারদের  প্রশিক্ষন দেয়, নাম ইয়োহান ক্রুইফ ইনস্টিটিউট।

  • ২০০৪ এ কাতালান ডিরেক্টর রেমন ক্রুইফের উপর একটা ডকুমেন্টারি তৈরী করে যেটার নাম ইয়োহান ক্রুইফ( এট এনি গিভেন মোমেন্ট)।

  • ক্রুইফকে কাতালান ও আয়াক্সে ইয়োফি নিক নেমে ডাকা হয়, তাকে এল সাল্ভাডোরও ডাকা হয়।

  • ক্রুইফের প্রিয় শখ ছিল বিভিন্ন রকমের কার কালেক্ট করা আর গল্ফ খেলা।

  • ইয়োহান ক্রুইফ ফাউন্ডেশন বিশ্বব্যাপী ২০০ এর বেশি স্কুল তৈরী করেছে যেগুলোর মধ্যে ২০ টি তে কেবল ফুটবল শেখানো হয়।



Share with your friends if you love our-Expose Lifestyle

For more  Visit -Expose Lifestyle


 

Hope you liked this Johan Cruyff biography, and if you have any queries or suggestions regarding the same, feel free to comment below.

No comments

Powered by Blogger.