Header Ads

Header ADS

আইজাক নিউটনের জীবনী- Sir Isaac Newton life story/Isaac Newton biography/Isaac Newton lifestyle

আইজাক নিউটনের জীবনী- Isaac Newton life story/Isaac Newton biography/Isaac Newton lifestyle


life story lifestyle biography
Sir Isaac Newton
জন্মঃ ৪ জানুয়ারি ১৬৪৩ সাল
জন্মস্থানঃ উল্‌সথর্প-বাই-কোল্‌স্টারওয়ার্থ, লিংকনশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যুঃ ৩১ মার্চ  ১৭২৭ সাল 
সমাধিস্থলঃ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি
জাতীয়তাঃ ইংল্যান্ড ইংরেজ
কর্মক্ষেত্রঃ ধর্মতত্ত্ব, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক দর্শন, এবং আলকেমি
প্রতিষ্ঠানঃ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েল সোসাইটি
প্রাক্তন ছাত্রঃ ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষায়তনিক উপদেষ্টাবৃন্দঃ আইজাক ব্যারো
পরিচিতির কারণঃ নিউটনীয় বলবিদ্যা,সর্বজনীন মহাকর্ষ সূত্র,ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্যালকুলাস
আলোকবিজ্ঞান,দ্বিপদী উপপাদ্য,ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস,প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা 



জন্ম

ইংল্যান্ডের লিনকনশায়ারের এক ছোট্ট একটি গ্রামে আইজ্যাক নিউটন জুনিয়র ১৬৪৩ সালের ৪ জানুয়ারি উলসথোর্পে জন্মগ্রহণ করেন।নিউটন জুনিয়রের জন্মের আগেই  তার বাবা, যার নামও ছিল আইজ্যাক নিউটন,তিনি মারা গিয়েছিলেন।যদিও নিউটনের বাবা পড়তে লিখতে জানতেন না, তথাপি তিনি ছিলেন স্বচ্ছল। কেই বা জানতো সেই অক্ষর জ্ঞানহীন কৃষক বাবার ঘরে জন্মানো ছেলেটিই একদিন পৃথিবী বদলে দেবে!


শৈশব জীবন এবং শিক্ষা

নিউটনের যখন তিন বছর, তখন তার মা হান্না এস্কো একজন পাদ্রিকে বিয়ে করেন। কিন্তু নিউটন তাকে বাবা হিসেবে মেনে নিতে পারতেন না। তাই তিনি মা-বাবার সাথে না থেকে নিজের নানী মার্জারী এস্কোর নিকট চলে যান। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে সৎ বাবার প্রতি এবং মায়ের প্রতি তার এই রাগ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরও বেড়ে যায়। কিশোর বয়সে তো একবার তিনি তাদের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়ারই হুমকি দিয়েছিলেন!১২ বছর বয়সে তিনি কিংস স্কুলে ভর্তি হন। সেই স্কুলেই তিনি ক্লাসিক বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়েছিলেন। গাণিতিক বিজ্ঞান সেখানে খুব একটা ছিল না, তথাপি নিউটন ছিলেন ক্লাসের সেরা শিক্ষার্থী। কিন্তু তার মা তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন  তার বয়স যখন ১৭, তখন যাতে বাবার মতো কৃষক হতে পারেন নিউটন। তার মাকে বাধ্য করে তাকে আবারো স্কুলে ভর্তি করাতে কারণ কৃষিকাজে তার দারুণ অনীহা ।


ট্রিনিটি কলেজে উচ্চশিক্ষা

life story lifestyle biography
Sir Isaac Newton
১৬৬১ সালে নিউটন ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে আইন বিষয়ক ডিগ্রী নিয়ে পড়া শুরু করেন। একই সাথে তিনি ধনী ছাত্রদের ব্যক্তিগত ভৃত্যের কাজ করেও টাকা আয় করতে শুরু করেন।ছাত্র হিসেবে বড় কোন কিছু তিনি করেছেন বলে ট্রিনিটি কলেজের কোন দলিলপত্র লেখা নেই। তবে জানা যায় তিনি মূলত গণিত ও বলবিজ্ঞান বিষয়ে অধিক পড়াশোনা করেছিলেন। ট্রিনিটি কলেজে প্রথমে তিনি কেপলারের আলোকবিজ্ঞান বিষয়ক সূত্রের উপর অধ্যয়ন করেন। এরপর অবশ্য তিনি ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রতি মনোনিবেশ করেন। কারণ মেলা থেকে কেনা জ্যোতিষ শাস্ত্রের একটি বইয়ে উল্লেখিত বেশ কিছু রেখাচিত্র তিনি বুঝতে পারছিলেন না। এগুলো বোঝার জন্য ইউক্লিডের জ্যামিতি জানা থাকাটা আবশ্যিক ছিল। তা সত্ত্বেও নিউটন বইটির কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এটি অকিঞ্চিৎকর বই হিসেবে সরিয়ে রাখেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার শিক্ষক আইজাক ব্যারো তাকে বইটি আবার পড়তে বলেন। বইটি লেখা হয়েছিল দেকার্তের জ্যামিতিক গবেষণা ও কর্মের উপর।মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে বিজ্ঞানীর হাত ধরে পদার্থবিদ্যার এত উন্নতি, সেই বিজ্ঞানীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সময় পদার্থবিদ্যা বলতে আলাদা কোনো কিছু ছিলই না!তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করতে করতে তিনি গণিত ও প্রাকৃতিক দর্শনশাস্ত্রে নিজ চেষ্টায় বেশ দক্ষ হয়ে ওঠেন। অ্যারিস্টটল এবং প্লেটোর প্রাচীন গ্রীক তত্ত্বের প্রতি প্রাথমিকভাবে কিছুটা আকর্ষণ অনুভব করলেও খুব শীঘ্রই তিনি তাদের তত্ত্বগুলোতে ভুল ধরতে পারেন।স্নাতক শিক্ষা গ্রহণকালে নিউটন একটি ছোট বইয়ের তাক বা এ ধরনের কোন স্থানে তার সব বই সাজিয়ে রাখতেন।সেই তাক থেকে নিউটনের সে সময়ে লেখা বেশ কিছু নিবন্ধ পাওয়া গেছে। এই লেখাগুলোর বিষয়ের মধ্যে রয়েছে: কৌণিক বিভাজন, বক্রসমূহের বর্গকরণ, সঙ্গীতের অনন্য সুর সম্বন্ধে কিছু গাণিতিক হিসাব, ভিয়েটা এবং ভ্যান স্কুটেনের জ্যামিতিক সমস্যা, ওয়ালিস রচিত এরিথমেটিক অফ ইনফিনিটিস বইয়ের উপর কিছু মন্তব্য, গোলীয় আলোক গ্লাসের ঘর্ষণের ফলাফল, লেন্সের ত্রুটি এবং সকল ধরনের মূল বের করার সূত্র। ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি লাভের প্রাক্কালেই নিউটন তার বিখ্যাত দ্বিপদী উপপাদ্য বিষয়ক সূত্র প্রমাণ করেন এবং একইসাথে ফ্লাক্‌সিয়নের পদ্ধতি (method of fluxion) আবিষ্কার বিষয়ক প্রথম তত্ত্ব প্রদান করেন। ট্রিনিটি কলেজের এই দিনগুলো তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজ এবং লন্ডনে প্লেগ রোগ মহামারী আকার ধারণ করে।এর ফলে কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। নিউটন লিংকনশায়ারে তাদের খামর বাড়িতে ফিরে যান।


লিংকনশায়ারে গবেষণা কাজ

উল্‌সথর্প ফিরে এসেও নিউটন থেমে থাকেননি। সেখানে মূলত রসায়ন এবং আলোকবিজ্ঞান বিষয়ের উপর বিভিন্ন পরীক্ষণ চালিয়ে যেতে থাকেন এবং একইসাথে চলতে থাকে তার গাণিতিক অনূধ্যানের প্রকল্পসমূহ। নিউটন তার মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিষ্কার বিষয়ক দিনপঞ্জির সূচনা চিহ্নিত করেছিলেন এই ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দকে, যে বছর তাকে ট্রিনিটি কলেজ ছেড়ে যেতে হয়েছিল। এ সম্বন্ধে তিনি বলেছেন:
একই সালে আমি চাঁদের কক্ষপথে বিস্তৃত অভিকর্ষ নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করি,... চাঁদকে তার নিজ কক্ষপথে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় বল এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে বিরাজমান অভিকর্ষ বলের মধ্যে তুলনা করি এবং এই দুটি বলের মান প্রায় সমান বলে চিহ্নিত করতে সক্ষম হই।একই সময়ে তিনি আলোকবিজ্ঞান বিষয়ে তার একটি মৌলিক পরীক্ষণের কাজ সম্পন্ন করেন। এই পরীক্ষণের মাধ্যমে তিনি সাদা আলোর গাঠনিক অংশসমূহ আবিষ্কারে সক্ষম হন।আলোকবিজ্ঞান বিষয়ে তার প্রাথমিক এই কাজ সম্বন্ধে নিউটন নিজেই মন্তব্য করেছেন:
এই সব কিছু আমি করেছিলাম মাত্র দুই বছর তথা ১৬৬৫ এবং ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, কারণ আমার জীবনের যেকোন সময়ের তুলনায় ওই সময়ে আমি বিশেষ উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে ছিলাম যে পর্যায়ে উদ্ভাবন এবং মনকেন্দ্রিক গণিত ও দর্শন চিন্তার বিকাশ ঘটেছিল।


গণিতশাস্ত্রের ফেলো এবং লুকেসিয়ান অধ্যাপক নিউটন



life story lifestyle biography
Sir Isaac Newton
১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে ট্রিনিটি কলেজ পুনরায় খোলা হয়। এবার কলেজ নিউটনকে ফেলো নির্বাচিত করে এবং এর দুই বছর পর অর্থাৎ তার ২৭তম জন্মদিনের কিছুদিন আগে তিনি সেখানকার গণিত বিভাগের লুকাসীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তার আগে ট্রিনিটি কলেজের এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তারই বন্ধু ও শিক্ষক ডঃ বারো। তখনকার সময়ে কেমব্রিজ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো হতে হলে কাউকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত অ্যাংগ্লিকান ধর্মপ্রচারক হতে হতো। আবার লুকাসীয় অধ্যাপকদের গির্জার সাথে যোগাযোগ থাকা নিষিদ্ধ ছিল, কারণ তা বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষতি করতে পারে। নিউটন লুকাসীয় অধ্যাপক হওয়ার সময় এই শর্ত থেকে নিজে অব্যাহতি চান। তখনকার রাজা দ্বিতীয় চার্লস তার দাবী মেনে নিয়ে তাকে অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করেন। এতে অ্যাংগ্লিকানদের সাথে নিউটনের ধর্মীয় চিন্তাধারার বিরোধের অবসান ঘটে। এরই মধ্যে ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে নিউটন একটি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছিলেন। ১৬৭১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে নিউটন দ্বিতীয় আরেকটি দূরবীন তৈরি করে রয়াল সোসাইটিকে উপহার দেন। এর দুই মাস পর রয়্যাল সোসাইটির একজন ফেলো হিসেবে তিনি আলো সম্বন্ধে তার আবিষ্কারসমূহ প্রচার করেন এবং এর মাধ্যমে আলো সম্বন্ধে একটি বিতর্কের সূচনা করেন। অনেক বছর ধরে এই বিতর্ক অব্যাহত ছিল। এই বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন রবার্ট হুক, লুকাস, লিনাস পাউলিং এবং আরো অনেকে। নিউটন অবশ্য এ ধরনের বিতর্ককে সবসময়ই বিস্বাদ জ্ঞান করতেন। আলো সম্বন্ধে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি তত্ত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি বিতর্কের জন্ম দেয়ার জন্য তিনি নিজের প্রজ্ঞাকেই দোষারোপ করতেন। আলোক বিজ্ঞান সম্বন্ধে তার গবেষণাপত্রসমূহের অধিকাংশই ১৬৭২ থেকে ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রয়েল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়। তার এই গবেষণাপত্রগুলোই ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে তার অপটিক্‌স নামক গ্রন্থে সংকলিত হয়েছিল।

আইজ্যাক নিউটনের জীবনের কিছু বিখ্যাত আবিষ্কারের পেছনের গল্প জানার আগে চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই পদার্থবিজ্ঞানে তার অবদান।
  • দ্বীপদ রাশির সার্বজনীন সূত্র আবিষ্কার।
  • প্রিজমের মাধ্যমে সূর্যরশ্নির বিশ্লেষণ এবং সাতটি আলোর বিভাজন আবিষ্কার।
  • প্রতিফলন টেলিস্কোপ আবিষ্কার।
  • পরিবর্তনের গাণিতিক রূপ ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন যা ছাড়া ইলেকট্রনের মতো ক্ষুদ্র কিংবা ছায়াপথের মতো বৃহৎ বস্তুর প্রকৃতি বোঝা সম্ভব ছিল না।
  • বিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ট বই প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা লেখেন।
  • মহাকর্ষ এবং সার্বজনীনন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক আবিষ্কার।
  • গতির তিনটি সূত্র আবিষ্কার।
  • মহাকর্ষের কারণে বস্তুর কণিক গতিপথ আলোচনা করেন যেমন বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার বা অধিবৃত্তাকার যা মহাকাশে গ্রহ নক্ষত্রের গতিপথও আলোচনা করে।
  • মহাকর্ষের কারণে জোয়ার-ভাটা হওয়া প্রমাণ করেন।
  • পৃথিবী সম্পূর্ণ গোল নয় বরং মেরু অঞ্চলে কিছুটা চাপা এই ভবিষ্যদ্বাণী করেন।



নিউটনের কিছু যুগান্তকারী আবিষ্কার

ক্যালকুলাস
ক্যালকুলাস হচ্ছে পরিবর্তন বিষয়ক গণিত। নিউটন ক্যালকুলাসকে সর্বপ্রথম সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করেন। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এবং ভৌত রসায়ন ক্যালকুলাস ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। তাছাড়াও জীববিজ্ঞান এবং অর্থনীতির মতো বিষয়গুলোও ক্যালকুলাসের উপর অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল। নিউটন তার বইয়ে বলেছিলেন যে, তিনি পিয়েরে ডি ফারম্যাটের কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ফারম্যাট উদাহরণের সাহায্যে দেখিয়েছিলেন কিভাবে ক্যালকুলাস ব্যবহার করা যায়, আর নিউটন তা বাস্তবায়ন করেন। তবে নিউটনের আবিষ্কারের সমসাময়িক সময়েই লেবিনিজ ক্যালকুলাস নিয়ে তার কাজ প্রকাশ করেন। বর্তমানে তাই অনেক ক্ষেত্রেই ক্যালকুলাস আবিষ্কারে নিউটনের পাশাপাশি লেবিনিজকেও সমানভাবে স্মরণ করা হয়।

আলোক বিজ্ঞান
life story lifestyle biography
Sir Isaac Newton

১৬৭০ থেকে ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিউটন আলোক বিজ্ঞানের উপর বক্তৃতা প্রদান করেন।এ সময়
তিনি আলোর প্রতিসরণ আবিষ্কার করেন। প্রিজম পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি এ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখেন, একটি ত্রিভুজাকার প্রিজমের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত সাদা আলোকে একটি পর্দার উপর ফেললে তা আলোকীয় বর্ণালিতে বিশ্লিষ্ট হয়। আবার একটি লেন্স এবং দ্বিতীয় আরেকটি প্রিজমের মাধ্যমে এ বহুবর্ণী আলোকে সংশ্লিষ্ট করে সাদা আলোতে পরিণত করা সম্ভব। তিনি দেখান বর্ণীল আলো থেকে একটি বর্ণের রশ্মিকে পৃথক করে বিভিন্ন বস্তুর উপর ফেললেও এর ধর্মের কোন পরিবর্তন হয় না। তিনি দেখতে পান প্রতিসরিত, বিক্ষিপ্ত বা সঞ্চালিত যা-ই হোক না কেন আলোর বর্ণ সব সময় একই থাকে। সুতরাং, আমরা যে বর্ণ পর্যবেক্ষণ করি তা আপতিত বর্ণীল আলোর সাথে বস্তুর মিথস্ক্রিয়ার ফলাফল; বস্তু কখনই বর্ণ তৈরি করতে পারে না।তার এ সকল গবেষণা কর্ম থেকে তিনি মন্তব্য করেন, যে কোন প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র আলোর বিভিন্ন বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগবে। এ সমস্যাকে অতিক্রম করার জন্য তিনি একটি প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করেন যা বর্তমানে নিউটনীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র নামে পরিচিত। নিউটনের বলয় ব্যবহার করে নিজের দূরবীনে ব্যবহৃত দর্পণে শান দেয়ার মাধ্যমে তিনি তার দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির আলোকীয় কর্মক্ষমতার মান সম্বন্ধে ধারণা লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। এভাবে তিনি প্রতিসরণ দূরবীনের চেয়ে কর্মক্ষম ও উঁচু দরের দূরবীন তৈরি করেন যাতে দর্পণের ব্যাস ছিল আগের চেয়ে বেশী।

১৬৭১ খ্রিস্টাব্দে রয়্যাল সোসাইটি তার প্রতিসরণ দূরবীনের একটি প্রদর্শনী দেয়ার আহ্বান জানায়। এদের উৎসাহেই তিনি তার আলোক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা "অন কালার" নামক একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন যা পরবর্তীতে তার বিখ্যাত গ্রন্থ অপটিক্‌স-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। রবার্ট হুক নিউটনের কিছু চিন্তাধারা সমালোচনা করায় নিউটন সকল ধরনের গণ বিতর্ক থেকে ইস্তফা দেন। হুকের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তারা পরস্পরের শত্রু ছিলেন।আলো কণা দিয়ে তৈরি এবং ঘনতর মাধ্যমে ত্বরণ সহকারে চলার সময় আলোর প্রতিসরণ ঘটে, এ ধারণা নিউটন প্রথমটায় বিশ্বাস করতেন না। অবশ্য পরে তিনি আলোকে তরঙ্গ এবং কণা উভয়টি দ্বারা গঠিত হিসেবে কল্পনা করে আলোর অপবর্তন ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, আলোকে একেবারে বিশুদ্ধ তরঙ্গ হিসেবে ধরে না নিলে এর অপবর্তণ কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। বর্তমানকালের কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান, ফোটন এবং তরঙ্গ-কলা দ্বিত্ব নিউটন আলোকে যেভাবে বুঝেছিলেন তারই এক ক্ষুদ্র সাদৃশ্যমাত্র।১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলোকীয় প্রকল্প প্রদানের সময় নিউটন দুটি কণার মধ্যে বলের আদান-প্রদাণ ঘটানোর মাধ্যম হিসেবে ইথারের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে ঘোষণা করেন। ধর্মতাত্ত্বিক সোফিবাদে বিশ্বাসী হেনরি মুরের সাথে যোগাযোগ থাকার সুবাদে নিউটন এ সময় আলকেমি নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন। হার্মেটীয়রা কণাসমূহের মধ্যবর্তী আকর্ষণ-বিকর্ষণের কারণ হিসেবে এক ধরনের অতিলৌকিক বলের কল্পনা করতো। নিউটন তার ইথার তত্ত্বকে এই অতিলৌকিক বলের ধারণা দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেন। জন মেনার্ড কেইনস, যিনি নিউটনের আলকেমি বিষয়ক অনেক লেখা সংগ্রহ করেছেন, তিনি একবার এ বিষয়ে বলেছিলেন, '''নিউটন কারণ অণুসন্ধানের যুগের প্রথম নন, বরং জাদুকরদের যুগের শেষ ব্যক্তি।'''


life story lifestyle biography
Sir Isaac Newton
অবশ্য নিউটনের আলকেমি বিষয়ক উৎসাহকে তার বিজ্ঞানের প্রতি অবদান থেকে আলাদা করে দেখার কোন উপায় নেই। তখন আলকেমি এবং বিজ্ঞানের মধ্যে কোন সুস্পষ্ট পার্থক্য রেখা টানা ছিল না। শূন্যস্থানের মধ্য দিয়ে এক অতিলৌকিক ক্রিয়া দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কাজ করে, এ ধারণা যদি নিউটন না করতেন, তাহলে হয়তো তার অভিকর্ষ বিষয়ক তত্ত্ব আবিষ্কারই সম্ভব হতো না।১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে নিউটন অপটিক্‌স নামক একটি গ্রন্থ লিখেন যাতে তিনি আলোর কণা তত্ত্ব বিষয়ে তার অভিমত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। তার মত ছিল, আলো অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম কণা দ্বারা গঠিত এবং সাধারণ পদার্থগুলোর গাঠনিক উপাদান হচ্ছে অপেক্ষাকৃত স্থুল কণা। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করেন, ";;এক ধরনের আলকেমিজাত ট্রান্সম্যুটেশনের মাধ্যমে কি সাধারণ পদার্থের স্থুল কণার সাথে আলোর মধ্যকার সূক্ষ্ণ কণাসমূহের পারষ্পরিক রুপান্তর ঘটানো সম্ভব নয়, এবং যে আলো কোন বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করে সে আলোর মধ্যবর্তী কণাসমূহের কারণে কি বস্তুটি তার অনেকগুলো ক্রিয়া করতে সক্ষম হয়না?";; এছাড়াও নিউটন কাচের গ্লোব ব্যবহার করে একটি আদি প্রকারের ঘর্ষণ স্থির-বৈদ্যুতিক জেনারেটর তৈরি করতে সক্ষম হন।''

বলবিজ্ঞান এবং মহাকর্ষ

life story lifestyle biography
Sir Isaac Newton


অনেকেই বলে থাকেন যে, নিউটনের আপেল নিয়ে প্রচলিত ঘটনাটি একটি নিছক গল্প। তবে এরকম মনে করার কোনো কারণ নেই। কেননা নিউটন নিজে এ কথা বলেছেন যে, গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখেই তিনি হঠাৎ একদিন মহাকর্ষের কথা ভাবতে শুরু করেন।নিজ বাড়ির পাশে আপেল বাগানে বসে প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করতেন নিউটন। একদিন একটি আপেল তার সামনে পড়লে তিনি ভাবতে শুরু করেন আপেলটি পৃথিবীর দিকে লম্বভাবে কেন পড়ছে? কেন উপরে যায় না বা আশেপাশে? এই ভাবনা থেকেই তার মাথায় আশে সৌরজগতের গ্রহগুলোর সূর্যকে কেন্দ্র করে এবং চাঁদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরার কথা। তিনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আছে যা এসব বস্তুকে নিজেদের দিকে আকর্ষিত করে। নিউটন এর নাম দেন মহাকর্ষ। আর পৃথিবী চাঁদকে বা তার বাগানে পড়ন্ত আপেলকে বা অন্য সকল বস্তুকে যে বলে আকর্ষণ করে নিজের সাথে আটকে রাখে তা হচ্ছে অভিকর্ষ। সাথে তৈরী করেন তার মহাকর্ষ বল পরিমাপের অমর সমীকরণ। সমীকরণটি একবার দেখে নিতে পারেন।

এই গাণিতিক সমীকরণটির সহজ বাংলা অনুবাদ এরকম- ''''মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তুকণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক, দূরুত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তুকণাদ্বয়ের কেন্দ্র বরাবর ক্রিয়া করে।''''


নিউটনের গতিসূত্র

চিরায়ত বলবিদ্যাকে কেন নিউটনিয়ান বলবিদ্যা বলা হয় তা নিউটনের গতির সূত্র তিনটি পড়ার পর অনুভব করতে পারা যায়। তার সূত্রগুলো তখন যেমন বলবিদ্যার জীবন ছিল, আজও তেমনি আছে। চলুন একনজরে দেখে নিই সূত্রগুলো-

১ম সূত্রঃ বল প্রয়োগ করা না হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সরলপথে চলতে থাকবে।

২য় সূত্রঃ বলপ্রয়োগে কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন এর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে হয়।অথবা,প্রযুক্ত বল বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক।

৩য় সূত্রঃ  '''প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।'''

তার গতিসূত্রের উপর ভিত্তি করেই আজকের বিশ্বে মানুষ প্রতিনিয়ত পৃথিবীর বাইরে রকেট পাঠাচ্ছে। হ্যাঁ, যে সূত্র নিউটন ৩০০ বছর আগে আবিষ্কার করেছিলেন, তার উপর ভিত্তি করে আজ রকেট চলছে। তবে নিউটনের সূত্রেরও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। আলোর কাছাকাছি গতিতে গতিশীল কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে এই সূত্র প্রযোজ্য হবে না। তখন আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্র প্রযোজ্য হবে। আবার অত্যন্ত ক্ষুদ্র বস্তু, যার ভর কিনা ইলেকট্রন, প্রোটনের মতো ক্ষুদ্র, তাদের ক্ষেত্রেও এই সূত্র প্রযোজ্য হয় না।


মৃত্যু


১৭২৭ সালের ৩১ মার্চ নিউটন ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে তাকে সমাহিত করা হয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেই তার পরিচয় শেষ করা যায় না।
 আলবার্ট আইনস্টাইন বলেন-
“প্রকৃতি ছিল নিউটনের কাছে একটি খোলা বইয়ের মতোই, যার পাতাগুলো নিউটন কোনোরকম কষ্ট ছাড়াই পড়তে পারতেন”
life story lifestyle biography
Sir Isaac Newton


Share with your friends if you love our-Expose Lifestyle


 For more  Visit-Expose Lifestyle

I hope you liked this Sir Isaac Newton life story, lifestyle, biography, and if you have any queries or suggestions regarding the same, feel free to comment below.

No comments

Powered by Blogger.