স্টিভেন হকিং এর জীবনী-Stephen Hawking life story/Stephen Hawking biography
স্টিভেন হকিং এর জীবনী-Stephen Hawking life story/Stephen Hawking biography
নামঃ স্টিফেন উইলিয়াম হকিং
জন্মঃ ৮ জানুয়ারি ১৯৪২
জন্মস্থানঃ অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য
মৃত্যুঃ ১৪ মার্চ ২০১৮ (বয়স ৭৬)
ক্যামব্রিজ, যুক্তরাজ্য
কর্মক্ষেত্রঃ সাধারণ আপেক্ষিকতা,কোয়ান্টাম মহাকর্ষ
প্রতিষ্ঠানঃ ক্যামব্রিজ,ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি
পেরিমিটার ইনস্টিটিউট ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স
শিক্ষাঃ সেন্ট আলবান্স স্কুল
প্রাক্তন ছাত্রঃ ইউনিভার্সিটি কলেজ, অক্সফোর্ড (বিএ)
ট্রিনিটি হল, ক্যামব্রিজ (এমএ, পিএইচডি)
পরিচিতির কারণঃ হকিং বিকিরণ
পেনরোজ-হকিং তত্ত্ব
বেকেনস্টাইন-হকিং সূত্র
হকিং শক্তি
গিবন্স–হকিং আনসাৎজ
গিবন্স–হকিং প্রভাব
গিবন্স–হকিং মহাশূন্য
গিবন্স–হকিং–ইয়র্ক বাউন্ডারি টার্ম
থর্ন–হকিং–প্রেস্কিল বাজি
কৃষ গহ্বর
তত্ত্বীয় সৃষ্টিতত্ত্ব
কোয়ান্টাম মহাকর্ষ
জন্ম ও ছোটবেলা
হকিং ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন।প্রথম জীবনে হকিং সেন্ট অ্যালবার স্কুলে পড়েন। ছোট থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি হকিংয়ের দারুণ আগ্রহ ছিল। ফ্রাঙ্ক হকিং চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক। তবে বাবার কথা না শুনে গণিত পড়তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান হকিং। তবে আলাদা করে গণিতের কোর্স সেসময়ে না থাকায় তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
পরিবার
হকিংয়ের বাবা ড, ফ্রাঙ্ক হকিং একজন জীববিজ্ঞান গবেষক ও মা ইসােবেল হকিং একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। হকিংয়ের।বাবা-মা দুজনের ছােটো পরিবারটি উত্তর লন্ডনে ছিল। কিন্তু সেই সময় লন্ডন তথা ব্রিটেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে।হকিং গর্ভে আসার পর তারা নিরাপত্তার অভাব বােধ করেন এবং অক্সফোর্ডে চলে যান। হকিংয়ের জন্ম হয় অক্সফোর্ডে। হকিং এর পরিবারে হকিং একা নয়, সাথে ফিলিপ্পা ও মেরি নামে হকিংয়ের দুই বােন রয়েছে। এছাড়া হকিং পরিবারে এডওয়ার্ড নামে এক পালকপুত্রও ছিল। কিন্তু স্টিভেনের জন্মের পর যুদ্ধের প্রভাব কমে গেলে তাঁরা আবার লন্ডনে ফিরে আসেন। সেখানে স্টিভেনের বাবা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল রিসার্চের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান।
হকিং এর স্কুল ও কলেজ জীবন
১৯৫০ হকিংদের পরিবার হার্টফোর্ডশায়ারের সেন্ট অ্যালবাতে চলে যান। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত হকিং সেন্ট অ্যালবার নামক একটি মেয়েদের স্কুলে পড়তেন। কারন সে সময় ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেরা মেয়েদের স্কুলে পড়ার অনুমতি পেতাে।এর পর যদিও স্কুল পরিবর্তন করে। তিনি কিন্তু।
বিদ্যালয়ে পড়াশােনাতে খুব একটা ভালাে ছিলেন না, অর্থাৎ স্কুলে তাঁর রেজাল্ট ভালাে ছিল বটে তবে অসাধারণ ছিল না। প্রচলিত আছে নাকি যখন তার বয়স ছিল নয় বছর তখন তিনি ছিলেন ক্লাসের সর্বশেষ মেধাক্রমের ছাত্র অর্থাৎ পেছনের দিক থেকে প্রথম। কিন্তু বিজ্ঞানে হকিংয়ের সহজাত আগ্রহ ছিল। আর এই আগ্রহের পেছনে যেনার ভূমিকা ছিল তিনি আর কেউ নন, হকিং এর স্কুলের গণিত শিক্ষক ডিকরান তাহতা। শিক্ষক ডিকরান তাহতার অনুপ্রেরণার কথা হকিং পরবর্তী জীবনে স্মরণ করতে ভুলে যান নি।হকিংয়ের বাবার পূর্ব ইচ্ছে ছিল হকিং যেন তাঁর মতােই ডাক্তার হয়। এর পেছােনের কারনটি হল অর্থাভাব কিন্তু হকিং গণিত পড়বে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন। স্টিফেন হকিং তাই অংশগ্রহণ করলেন স্কলারশিপ পরীক্ষায় এবং টিকেও গেলেন সফলতার।স্বাক্ষর রেখে। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে যান। কিন্তু এখানেও একটিসমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেই সময় যেহেতু সেখানে গণিতের কোর্স পড়ানাে হতাে না, সেজন্য হকিং সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন যে তিনি।পদার্থবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়া শুরু করবেন। সেই সময়ে তাঁর আগ্রহের বিষয় ছিল তাপগতিবিদ্যা, আপেক্ষিকতা এবংকোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রভৃতি।
(সূত্র- Stephen Hawking A Biography. Greenwood Press। ১৯৯৫)
(সূত্র-*Dick Tahta"। The Guardian। সংগৃহীত ২০০৮-০৫-১৯)।
অসুখে আক্রান্ত
বয়স কুড়ি হবার পরই পিএইচডি করার সময় হকিং নিজের অসুখের কথা জানতে পারেন। কেমব্রিজে সেইসময় পড়ছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন সেইসময়ে।তিনি ১৯৬০ এর দশক থেকেই হুইল চেয়ারের ব্যবহার করেন। বহু পরীক্ষার পর জানা গেল তিনি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। স্নায়ুর এই রোগ হকিংয়ে ধীরে ধীরে অবশ করে চলেছে। সেইসময়ে বলা হয়েছিল, এই রোগ হলে রোগী খুব বেশি হলে ২-৩ বছর বা সর্বাধিক পাঁচ বছর বাঁচে। অথচ সেই ধাক্কা সামলে তার পরের পাঁচ দশক হকিং লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা ১৯৮৫ সালে ফের একবার মৃত্যুর মুখ থেকে হকিং ফিরে আসেন। তখন অন্য রোগ হকিংয়ের জীবন কাড়তে চলেছিল।নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। একসময়ে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কোমায় চলে গিয়েছিলেন হকিং। সেখান থেকে ফের লড়াই করে ফিরে আসেন তিনি।
বিয়ে ও বিচ্ছেদ
কেমব্রিজে হকিং যখন স্নাতক শ্রেণীর শিক্ষার্থী, তখন জেন ওয়াইল্ডের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জেন ছিলেন তার বোনের বান্ধবী। ১৯৬৩ সালে হকিংয়ের মোটর নিউরন রোগের চিকিৎসার পূর্বে জেনের সাথে তার পরিচয় হয়। ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়। হকিং পরবর্তীতে বলেন এই বাগদান তাকে "বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা" যোগায়। ১৯৬৫ সালের ১৪ই জুলাই তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।বিবাহের প্রথম বছরে জেন লন্ডনে বসবাস করতেন এবং তার ডিগ্রি অর্জন করেন। তারা কনফারেন্স ও পদার্থবিজ্ঞান-বিষয়ক কাজের জন্য কয়েকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। ফলিত গণিত ও তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নিকটবর্তী স্থানে বাড়ি খুঁজে পেতে তাদের ঝামেলা পোহাতে হয়। জেন পিএইচডি শুরু করেন। তাদের পুত্র রবার্ট ১৯৬৭ সালের মে মাসে জন্মগ্রহণ করে। তাদের কন্যা লুসি ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করে, এবং তৃতীয় সন্তান টিমোথি ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে জন্মগ্রহণ করে।যদিও ১৯৯৫ সালে জেনের সঙ্গে বিচ্ছেদ করে ম্যাসন নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন হকিং। তবে ২০০৬ সালে ম্যাসনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় ও ফের জেন ও পরিবারের সঙ্গে হকিংয়ের ঘনিষ্টতা বেড়ে ওঠে।তাদের সম্পর্কের অভিবাক্তি প্রকাশের জন্য একটা বই লেখেন।যার নাম-Travelling to infinity:My life with stephen
প্রতিষ্ঠা এবং হকিংয়ের গবেষণা
পদার্থবিজ্ঞানী হকিং প্রথম ব্ল্যাক হোল-এর অনিশ্চয়তার তত্ত্বে আলোকপাত করেন। প্রমাণ করেন ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরিত হচ্ছে কণা প্রবাহ। এই বিকিরণের নাম পরে হকিংয়ের নামে রাখা হয়। কসমোলজি ও কোয়ান্টাম মধ্যাকর্ষ হকিংয়ের প্রধান গবেষণার ক্ষেত্র ছিল। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে নতুন মডেল তৈরি করেন হকিং। সেই মডেলকে সামনে রেখে নিজের বক্তব্য প্রমাণ করেন তিনি।
স্টিফেন হকিং সর্বকালের সেরা জোতির্বিজ্ঞানীদের একজন। তিনি মুলত মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য,ব্ল্যাকহোল,স্পেস-টাইম ও মাত্রা নিয়ে গবেষণার জন্য বিখ্যাত। তার রোগটি তাকে গবেষণায় মনোযোগী করতে ব্যাপক সাহায্য করেছে এটা তিনি নিজেই স্বীকার করেন। যেহেতু সারাদিন হুইলচেয়ারে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তাই সবসময় তিনি বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তাভাবনায় ব্যাস্ত থাকতেন। এ নিয়ে হকিং নিজেই বলেন- "আমার অবস্থা নির্ণয়ের আগে, আমি জীবন নিয়ে খুব উদাস হয়ে পড়েছিলাম," তিনি বলেছিলেন। "সেখানে করার মতো উপযুক্ত কিছু মনে হয় নি।" ১৯৬৮ সালে হকিং ক্যামব্রিজের ইন্সটিটিউট অব অ্যাস্ট্রনমির সদস্যপদ লাভ করেন।এরপর থেকে তার পুরো জীবনই ছিল বিজ্ঞানময়। ১৯৭৩ সালে তিনি তার প্রথম বই-The Large Scale Structure Of Space-Time প্রকাশ করেন।তখন থেকেই তিনি সারা বিশ্বের জোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন। ৩২ বছর বয়সে তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ব্ল্যাকহোল এবং আইনস্টাইনের আপেক্ষিককতার তত্ত্ব নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা চালাতে থাকেন এবং ব্ল্যাকহোল সম্পর্কিত হকিং রেডিয়েশন আবিষ্কার করেন।তার দাবি ছিল যে তিনি নাকি ১১ মাত্রা পর্যন্ত কল্পনা করতে পারেন।যেই বিষয়টির জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত তা হলো বিগ ব্যাং থিওরি।এই থিওরির মুল তত্ত্ব হলো এই মহাবিশ্ব একসময় খুব ছোট আকারে ঘনীভূত ছিল এরপর একটি মহাবিস্ফোরনের মাধ্যমে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যেতে থাকে এবং এখনো এটি আরো বেশি পরিধিতে ছড়াচ্ছে।
হকিংয়ের সাফল্য
হকিংয়ের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল পদার্থবিদ্যাকে সরলভাবে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মিলিয়ে দেওয়াও হকিংয়ের বড় সাফল্য। মহাবিশ্বের কোনও স্থানই শূন্য নয়। সবসময় কণা-প্রতিকার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার তারা পরমুহূর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নিজের তত্ত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন হকিং।
প্রকাশিত বইসমুহ
স্টিফেন হকিং এপর্যন্ত মোট ১৪ই বই প্রকাশ করেছেন এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ১৯৯৮ সালের A Brief History Of Time এই বইয়ে তিনি মহাবিস্ফোরন তত্ত্ব উল্লেখ করেন।বইটি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং প্রায় ৪০টি ভাষায় এটি অনুদিত হয়েছে। তার লেখা আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হলো-২০০১ এ প্রকাশিত The Universe In A Nutshell,২০০৫সালে A Briefer History Of Time,২০১০ এ The Grand Design.
ধর্ম বিশ্বাস
নিজের বই বা বক্তৃতায় নানা প্রসঙ্গে হকিং “ঈশ্বর” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তার স্ত্রীসহ অনেকে তাকে একজন নাস্তিক হিসাবে বর্ণনা করেন। হকিং নিজে মনে করেন তিনি “সাধারণ অর্থে ধার্মিক নন” এবং তিনি বিশ্বাস করেন “দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”।
পুরস্কার এবং সম্মাননা
১৯৭৪ এ তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ অর্জন করেন।বিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করেন। তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন অ্যাওয়ার্ড সহ আরো বিভিন্ন পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেন।প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ জানান। সেখানে বাংলাদেশি নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুস ও উপস্থিত ছিলেন।২০০৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় কসমোলজি কেন্দ্রে হকিংয়ের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর তাদের রাজধানী সান সালভাদরে বিজ্ঞান জাদুঘরটির নাম হকিংয়ের নামে রেখেছে। আফ্রিকান ইন্সটিটিউট অফ ম্যাথমেটিকাল সায়েন্সের সামনে তার আরেকটি মুর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া তিনি তার কর্মক্ষেত্রে অবদানের জন্য নিম্নোক্ত পদক ও পুরস্কার অর্জন করেছেন।
মৃত্যু
হকিং ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ কেমব্রিজে তার বাড়িতে মারা যান। তার সন্তানরা তাদের দুঃখ প্রকাশ করে এই মর্মে একটি বিবৃতি জারি করেছে। তার মৃত্যুতে গনভিল অ্যান্ড কাইয়ুস কলেজের পতাকা অর্ধ-নমিত রাখা হয় এবং সেখানকার শিক্ষার্থী ও অতিথিরা শোক বইয়ে সাক্ষর করেন।তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩১শে মার্চ ক্যামব্রিজের গ্রেট সেন্ট ম্যারিস গির্জায়। শেষকৃত্যের অতিথি হিসেবে ছিলেন এডি রেডমেইন, ফেলিসিটি জোন্স ও কুইন ব্যান্ডের গিটারবাদক ব্রায়ান মে। তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার পর ২০১৮ সালের ১৫ই জুন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে আইজাক নিউটনের সমাধির পাশে ও চার্লস ডারউইনের সমাধি সংলগ্ন অংশে তার ভস্ম পুঁঁতে ফেলা হয়।
স্টিভেন হকিং এর কিছু তথ্য
তিনি এপর্যন্ত বিভিন্ন টেলিভিশন এবং সিনেমাতে গেস্ট হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। তাকে দ্যা সিম্পসনস এবং স্টার ট্রেক সিনেমাতে দেখা গেছে। তাকে নিয়ে কয়েকটি টিভিতে প্রামাণ্য চিত্রও প্রকাশিত হয়েছে এবং স্টিফেন হকিংয়ের জীবনী নিয়ে একটি মুভিও হয়েছে নাম থিওরি অফ এভরিথিং(Theory Of Everything)।
নামঃ স্টিফেন উইলিয়াম হকিং
Stephen Hawking |
জন্মস্থানঃ অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য
মৃত্যুঃ ১৪ মার্চ ২০১৮ (বয়স ৭৬)
ক্যামব্রিজ, যুক্তরাজ্য
কর্মক্ষেত্রঃ সাধারণ আপেক্ষিকতা,কোয়ান্টাম মহাকর্ষ
প্রতিষ্ঠানঃ ক্যামব্রিজ,ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি
পেরিমিটার ইনস্টিটিউট ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স
শিক্ষাঃ সেন্ট আলবান্স স্কুল
প্রাক্তন ছাত্রঃ ইউনিভার্সিটি কলেজ, অক্সফোর্ড (বিএ)
ট্রিনিটি হল, ক্যামব্রিজ (এমএ, পিএইচডি)
পরিচিতির কারণঃ হকিং বিকিরণ
পেনরোজ-হকিং তত্ত্ব
বেকেনস্টাইন-হকিং সূত্র
হকিং শক্তি
গিবন্স–হকিং আনসাৎজ
গিবন্স–হকিং প্রভাব
গিবন্স–হকিং মহাশূন্য
গিবন্স–হকিং–ইয়র্ক বাউন্ডারি টার্ম
থর্ন–হকিং–প্রেস্কিল বাজি
কৃষ গহ্বর
তত্ত্বীয় সৃষ্টিতত্ত্ব
কোয়ান্টাম মহাকর্ষ
জন্ম ও ছোটবেলা
হকিং ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন।প্রথম জীবনে হকিং সেন্ট অ্যালবার স্কুলে পড়েন। ছোট থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি হকিংয়ের দারুণ আগ্রহ ছিল। ফ্রাঙ্ক হকিং চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক। তবে বাবার কথা না শুনে গণিত পড়তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান হকিং। তবে আলাদা করে গণিতের কোর্স সেসময়ে না থাকায় তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
পরিবার
হকিংয়ের বাবা ড, ফ্রাঙ্ক হকিং একজন জীববিজ্ঞান গবেষক ও মা ইসােবেল হকিং একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। হকিংয়ের।বাবা-মা দুজনের ছােটো পরিবারটি উত্তর লন্ডনে ছিল। কিন্তু সেই সময় লন্ডন তথা ব্রিটেনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে।হকিং গর্ভে আসার পর তারা নিরাপত্তার অভাব বােধ করেন এবং অক্সফোর্ডে চলে যান। হকিংয়ের জন্ম হয় অক্সফোর্ডে। হকিং এর পরিবারে হকিং একা নয়, সাথে ফিলিপ্পা ও মেরি নামে হকিংয়ের দুই বােন রয়েছে। এছাড়া হকিং পরিবারে এডওয়ার্ড নামে এক পালকপুত্রও ছিল। কিন্তু স্টিভেনের জন্মের পর যুদ্ধের প্রভাব কমে গেলে তাঁরা আবার লন্ডনে ফিরে আসেন। সেখানে স্টিভেনের বাবা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল রিসার্চের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান।
১৯৫০ হকিংদের পরিবার হার্টফোর্ডশায়ারের সেন্ট অ্যালবাতে চলে যান। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত হকিং সেন্ট অ্যালবার নামক একটি মেয়েদের স্কুলে পড়তেন। কারন সে সময় ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেরা মেয়েদের স্কুলে পড়ার অনুমতি পেতাে।এর পর যদিও স্কুল পরিবর্তন করে। তিনি কিন্তু।
বিদ্যালয়ে পড়াশােনাতে খুব একটা ভালাে ছিলেন না, অর্থাৎ স্কুলে তাঁর রেজাল্ট ভালাে ছিল বটে তবে অসাধারণ ছিল না। প্রচলিত আছে নাকি যখন তার বয়স ছিল নয় বছর তখন তিনি ছিলেন ক্লাসের সর্বশেষ মেধাক্রমের ছাত্র অর্থাৎ পেছনের দিক থেকে প্রথম। কিন্তু বিজ্ঞানে হকিংয়ের সহজাত আগ্রহ ছিল। আর এই আগ্রহের পেছনে যেনার ভূমিকা ছিল তিনি আর কেউ নন, হকিং এর স্কুলের গণিত শিক্ষক ডিকরান তাহতা। শিক্ষক ডিকরান তাহতার অনুপ্রেরণার কথা হকিং পরবর্তী জীবনে স্মরণ করতে ভুলে যান নি।হকিংয়ের বাবার পূর্ব ইচ্ছে ছিল হকিং যেন তাঁর মতােই ডাক্তার হয়। এর পেছােনের কারনটি হল অর্থাভাব কিন্তু হকিং গণিত পড়বে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন। স্টিফেন হকিং তাই অংশগ্রহণ করলেন স্কলারশিপ পরীক্ষায় এবং টিকেও গেলেন সফলতার।স্বাক্ষর রেখে। তারপর স্বাভাবিক ভাবেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হয়ে যান। কিন্তু এখানেও একটিসমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেই সময় যেহেতু সেখানে গণিতের কোর্স পড়ানাে হতাে না, সেজন্য হকিং সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন যে তিনি।পদার্থবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়া শুরু করবেন। সেই সময়ে তাঁর আগ্রহের বিষয় ছিল তাপগতিবিদ্যা, আপেক্ষিকতা এবংকোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রভৃতি।
(সূত্র- Stephen Hawking A Biography. Greenwood Press। ১৯৯৫)
(সূত্র-*Dick Tahta"। The Guardian। সংগৃহীত ২০০৮-০৫-১৯)।
অসুখে আক্রান্ত
বয়স কুড়ি হবার পরই পিএইচডি করার সময় হকিং নিজের অসুখের কথা জানতে পারেন। কেমব্রিজে সেইসময় পড়ছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন সেইসময়ে।তিনি ১৯৬০ এর দশক থেকেই হুইল চেয়ারের ব্যবহার করেন। বহু পরীক্ষার পর জানা গেল তিনি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। স্নায়ুর এই রোগ হকিংয়ে ধীরে ধীরে অবশ করে চলেছে। সেইসময়ে বলা হয়েছিল, এই রোগ হলে রোগী খুব বেশি হলে ২-৩ বছর বা সর্বাধিক পাঁচ বছর বাঁচে। অথচ সেই ধাক্কা সামলে তার পরের পাঁচ দশক হকিং লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা ১৯৮৫ সালে ফের একবার মৃত্যুর মুখ থেকে হকিং ফিরে আসেন। তখন অন্য রোগ হকিংয়ের জীবন কাড়তে চলেছিল।নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। একসময়ে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কোমায় চলে গিয়েছিলেন হকিং। সেখান থেকে ফের লড়াই করে ফিরে আসেন তিনি।
বিয়ে ও বিচ্ছেদ
হকিং/জেন |
প্রতিষ্ঠা এবং হকিংয়ের গবেষণা
পদার্থবিজ্ঞানী হকিং প্রথম ব্ল্যাক হোল-এর অনিশ্চয়তার তত্ত্বে আলোকপাত করেন। প্রমাণ করেন ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর থেকে বিকিরিত হচ্ছে কণা প্রবাহ। এই বিকিরণের নাম পরে হকিংয়ের নামে রাখা হয়। কসমোলজি ও কোয়ান্টাম মধ্যাকর্ষ হকিংয়ের প্রধান গবেষণার ক্ষেত্র ছিল। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব থেকে নতুন মডেল তৈরি করেন হকিং। সেই মডেলকে সামনে রেখে নিজের বক্তব্য প্রমাণ করেন তিনি।
Stephen Hawking |
হকিংয়ের সাফল্য
হকিংয়ের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল পদার্থবিদ্যাকে সরলভাবে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা এবং বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মিলিয়ে দেওয়াও হকিংয়ের বড় সাফল্য। মহাবিশ্বের কোনও স্থানই শূন্য নয়। সবসময় কণা-প্রতিকার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার তারা পরমুহূর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নিজের তত্ত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন হকিং।
প্রকাশিত বইসমুহ
The Grand Design
|
ধর্ম বিশ্বাস
নিজের বই বা বক্তৃতায় নানা প্রসঙ্গে হকিং “ঈশ্বর” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তার স্ত্রীসহ অনেকে তাকে একজন নাস্তিক হিসাবে বর্ণনা করেন। হকিং নিজে মনে করেন তিনি “সাধারণ অর্থে ধার্মিক নন” এবং তিনি বিশ্বাস করেন “দুনিয়া বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই চলে। এমন হতে পারে নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর জন্য কখনো হস্তক্ষেপ করেন না”।
Stephen Hawking/Barack Obama/Muhammad Yunus |
এছাড়া তিনি তার কর্মক্ষেত্রে অবদানের জন্য নিম্নোক্ত পদক ও পুরস্কার অর্জন করেছেন।
- অ্যাডামস পুরস্কার (১৯৬৬)
- এডিংটন পদক (১৯৭৫)
- ম্যাক্সওয়েল পদক ও পুরস্কার (১৯৭৬)
- গাণিতিক পদার্থবিদ্যায় ড্যানি হাইনম্যান পুরস্কার (১৯৭৬)
- হিউ পদক (১৯৭৬)
- আলবার্ট আইনস্টাইন পদক (১৯৭৮)
- রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির স্বর্ণ পদক (১৯৮৫)
- ডিরাক পুরস্কার (১৯৮৭)
- উলফ পুরস্কার (১৯৮৮)
- প্রিন্স অব অ্যাস্টুরিয়াস পুরস্কার (১৯৮৯)
- অ্যান্ড্রু গেম্যান্ট পুরস্কার (১৯৯৮)
- নেলর পুরস্কার ও লেকচারশিপ (১৯৯৯)
- লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার (১৯৯৯)
- রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসের আলবার্ট পদক (১৯৯৯)
- কপলি পদক (২০০৬)
- প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (২০০৯)
- ফান্ডামেন্টাল ফিজিক্স পুরস্কার (২০১২)
- বিবিভিএ ফাউন্ডেশন ফ্রন্টিয়ারস অব নলেজ পুরস্কার (২০১৫)
মৃত্যু
হকিং ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ কেমব্রিজে তার বাড়িতে মারা যান। তার সন্তানরা তাদের দুঃখ প্রকাশ করে এই মর্মে একটি বিবৃতি জারি করেছে। তার মৃত্যুতে গনভিল অ্যান্ড কাইয়ুস কলেজের পতাকা অর্ধ-নমিত রাখা হয় এবং সেখানকার শিক্ষার্থী ও অতিথিরা শোক বইয়ে সাক্ষর করেন।তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩১শে মার্চ ক্যামব্রিজের গ্রেট সেন্ট ম্যারিস গির্জায়। শেষকৃত্যের অতিথি হিসেবে ছিলেন এডি রেডমেইন, ফেলিসিটি জোন্স ও কুইন ব্যান্ডের গিটারবাদক ব্রায়ান মে। তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার পর ২০১৮ সালের ১৫ই জুন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে আইজাক নিউটনের সমাধির পাশে ও চার্লস ডারউইনের সমাধি সংলগ্ন অংশে তার ভস্ম পুঁঁতে ফেলা হয়।
স্টিভেন হকিং এর কিছু তথ্য
তিনি এপর্যন্ত বিভিন্ন টেলিভিশন এবং সিনেমাতে গেস্ট হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। তাকে দ্যা সিম্পসনস এবং স্টার ট্রেক সিনেমাতে দেখা গেছে। তাকে নিয়ে কয়েকটি টিভিতে প্রামাণ্য চিত্রও প্রকাশিত হয়েছে এবং স্টিফেন হকিংয়ের জীবনী নিয়ে একটি মুভিও হয়েছে নাম থিওরি অফ এভরিথিং(Theory Of Everything)।
- তার মহাকাশ ভ্রমণের শখ ছিল। সায়েন্টিস্টরা একবার একটি বোয়িং বিমানে জিরো গ্র্যাভিটি সৃষ্টি করে ওনাকে সেখানে নিয়ে যান। উনি সেটা খুব পছন্দ করেছিলেন এবং বলেছেন- The zero-G part was wonderful, and the high-G part was no problem. I could have gone on and on. Space, here I come!
- স্টিফেন হকিং এলিয়েনে বিশ্বাস করেন। তিনি মনে করেন এই মহাবিশ্বে হয়তো কোনো গ্রহে এলিয়েন থাকতে পারে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারনে হকিং এপর্যন্ত অনেকবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন।তিনি ধারনা করেন প্রযুক্তি যেভাবে এগোচ্ছে সেভাবে হয়তো একসময় মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট আবিষ্কার হয়ে যাবে। তখন সেগুলো মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তার লেখা বই A Brief History Of Time এ শুধুমাত্র একটি গাণিতিক সমস্যা আছে। সেটি হলো আইনস্টাইনের বিখ্যাত সুত্র E=mc^2.
Share with your friends if you love our-Expose Lifestyle
For more Visit-Expose Lifestyle
I hope you liked this Stephen Hawking biography, and if you have any queries or suggestions regarding the same, feel free to comment below.
No comments