সাকিব আল হাসানের জীবনী Lifestory/Lifestyle/Biography/Info.
সাকিব আল হাসানের জীবনী-
Shakib Al Hasan Lifestory/Shakib Al Hasan Lifestyle/Shakib Al Hasan Biography/Info.
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্মঃ ২৪ মার্চ, ১৯৮৭ (বয়স ৩৩ বছর)
জন্ম স্থানঃ মাগুরা, খুলনা, বাংলাদেশ।
ডাকনামঃসাকিব, ফয়সাল , ময়না।
উচ্চতাঃ ৫ ফুট ০৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার)।
বাবার নামঃমোঃমাশরুর রেজা
মায়ের নামঃ মোছাঃশিরিন শারমিন
স্ত্রীঃ উম্মে আহমেদ শিশির
শিশুঃ অলআইনা হাসান আব্রি
দলঃবাংলাদেশ, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার, বাংলাদেশ ‘এ’ দল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশ, বার্বাডোস ট্রাইডেন্টস, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস, ঢাকা আবাহনী,
ঢাকা মোহামেডান, লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ, জ্যামাইকা তাল্লাওয়াস, করাচি কিংস, খুলনা ডিভিশন, কলকাতা নাইট রাইডার্স, পেসোয়ার জালমি, সানরাইজার্স হাইদ্রাবাদ, ওরচেস্টারশায়ার।
জন্ম ও শৈশব
সাকিব আল হাসান ১৯৮৭ সালের ২৩শে মার্চ মাগুরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাশরুর রেজা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মাতা শিরিন শারমিন একজন গৃহিণী।তরুণ বয়সেই সাকিব খেলা পাগল ছিলেন।
সাকিবের প্রেম ও বিয়ে
গল্প নয়, সত্যি- বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জীবনেও প্রেম ধরা দিয়েছিল।তবে তা ফেসবুকে। যাকে নিয়ে সংসার পেতেছেন, সেই উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে পরিচয় নেটের জগতে। এবার তাহলে চলুন ফেসবুকের দিনগুলোর সেই প্রেমের গল্পটা শুনে নেই।পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে থাকতেন শিশির। তখন পড়াশোনা করছিলেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও শিশিরের জন্ম ঢাকায়, বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর আগে তাঁর বাবা অগ্রণী ব্যাংকের চাকুরে ছিলেন। ১০ বছর বয়সে বাবা-মা’র সঙ্গে চলে যান মার্কিনমুল্লুকে। শিশিরের পরিবারে আছেন বাবা-মা, চার ভাই ও দুই বোন। সবাই থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটিতে দিন কাটছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা পেয়ে গেলেন সাকিবের। বদলে গেল জীবন। যদিও ক্রিকেট খেলাটা তেমন টানতো না তাকে। তারপরও নামটা জানতেন। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পরীক্ষা শেষ করে ২০১০ সালে বেড়াতে যান ইংল্যান্ডে। তখন সেখানে কাউন্টি ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। কোন এক অনুষ্ঠানে চোখে চোখ পড়তেই শুরু সিনেমার গল্পের মতো মুগ্ধতা।কাউন্টির দল ওস্টারশায়ারে খেলতে থাকা সাকিব ভাবেননি এই মেয়েটিই একদিন তার ঘরণী হবেন। কিন্তু নিজেদের অজান্তেই একটু একটু করে ভালা লাগা থেকেই জন্ম নিল ভালোবাসা। তবে মন বিনিময় আরো পরে।অন্তর্জাল আর মুঠোফোনই তখন তাদের সম্পর্কের সেতু তৈরি করে দিয়েছিল। ওস্টারশায়ারের হয়ে মিশন শেষে দেশে ফেরেন সাকিব। অন্যপ্রান্তে শিশির তখন ব্যস্ত পড়াশোনায়। চলে যান উইসকনসিনে।সাকিব খেলায় মন দেন। শিশির ইউনিভার্সিটির ব্যস্ত সূচিতে। তারপরও কোনো ব্যস্ততাই তাঁদেরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে পারেনি।
এভাবেই দিন কাটতে থাকল, একসময় গাঢ় হতে থাকে তাদের প্রেম। বাংলাদেশের ‘মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর’ ভাবতে থাকেন বিয়ের কথা। কিন্তু বিয়ে তো শুধুই দুজনের সম্পর্ক নয়। বিয়ে দুটো পরিবারেরও।পারিবারিকভাবেই এগিয়েছে বাকি আলোচনা। ঠিক হয় বিশেষ দিনে বিয়ে হবে তাদের। তারিখ ঠিক করা হয় ২০১২ ডিসেম্বরের ১২ তারিখ। বিশেষ দিনই তো- ১২.১২.১২! রূপসী বাংলা হোটেলে ২০ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয় তাদের। বিয়েতে সাকিব পড়েন সাদা পাঞ্জাবি আর শিশির লাল টুকটুকে শাড়ি!এখন অহর্নিশ সুখের ভেলায় ভাসছেন সাকিব-শিশির। সংসারে এসেছে নতুন অতিথি। মিষ্টি ছোট্ট কন্যা আলাইনা হাসান অব্রেকে নিয়েই সময় কেটে যাচ্ছে এই দুই সেলিব্রেটির। কোনো কোনো সফরে এখন স্ত্রী-সন্তানকে পাশে রাখছেন সাকিব। সাফল্যও পাচ্ছেন তিনি। ভালবাসার মানুষ পাশে থাকলে বুঝি সব লড়াই সহজ হয়ে উঠে!মজার ব্যাপার হলো, শিশির শুরুতে ক্রিকেট একদম বুঝতো না, সে সাকিবের খেলা দেখে বলে, আচ্ছা তোমার গায়ে কি শক্তি নাই, তুমি কেন আস্তে আস্তে বল করো, অন্যদের মত দৌড়ে গিয়ে জোরে বল করতে পারো না।। ভাবুন একবার, বিশ্বসেরা স্পিন অলরাউন্ডারের বউয়ের কথার কি বাহার!!তারপর শিশির বলতো- আমি বুঝি না তুমি ব্যাট দিয়ে জোরে মারো, আবার মাঝে মাঝে আস্তে মেরে ক্যাচ কেনো তুলে দাও?? আমি ক্যাচ আউট একদম সহ্য করতে পারি না, আরেকটু জোরে মারলেই তো সোজা বল দূরে চলে যায়।। শিশিরের কথা হলো, মারলে তুমি সর্ব শক্তি দিয়েই মারবা, নইলে বল শুধু নিচ দিয়ে মারবা, উপরে তোলার দরকার নেই।। আহা রে, বেচারী বউকে কে বোঝাবে- ক্রিকেটে ব্যাটে বলে টাইমিং বলে যে একটা জিনিস আছে।।সাকিব মাঝে মাঝে চিৎকার করে শিশিরকে ডেকে বলে- এই এদিকে আসো, তাড়াতাড়ি আসো।। শিশির হয়তো হন্তদন্ত হয়ে সাকিবের কাছে ছুটে যায়, সাকিব মোবাইল বা ল্যাপটপ দেখিয়ে বলে মেসির এই ড্রিবলিংটা জোস না।। শিশির অবাক হয়ে ভাবে, একটা মানুষ এতটা মেসি ভক্ত কিভাবে হয়।। সাকিব নাকি সারাদিনই অবসরে হয় মুভি নয়তো মেসির ভিডিও দেখে।। সাকিবের একটা অন্যতম ইচ্ছা, ন্যু’ক্যাম্পে গিয়ে মেসির খেলা দেখা।
ক্রিকেটে তার পথ চলা
মাগুরায় তাকে সবাই ফয়সাল নামেই চেনে। পরিবারের মানুষজনের কাছে এখনো তিনি ফয়সালই। অনেকেই জানেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ডাক নাম ফয়সাল। সাকিবের বাবা মাশরুর রেজা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মাতা শিরিন শারমিন একজন গৃহিণী।
পারিবারিক বলয়ের কারণে ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল ছিলেন সাকিব। তবে সেই বলয়ের কারণে সাকিবের হওয়ার কথা ছিল ফুটবলার।সাকিবের বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে এবং এক কাজিন
বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতেন। কিন্তু সাকিবের গন্তব্য ছিল ভিন্ন দিকে। একজন ক্রিকেটার সারা বিশ্ব কাঁপানোর যে অদৃষ্টের লিখন ছিল, সাকিব সেদিকেই হাঁটছিলেন।সাকিবের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে ফুটবলার হোক। একটা সময় সাকিব নিজেও ফুটবলার হতে চাইতেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জয় করে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলে সারা দেশে শুরু হওয়া ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত হলেন সাকিবও। তাই শেষ পর্যন্ত সাকিব ক্রিকেটকেই বেছে নিলেন। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।২০০১ সালের দিকে ক্লাস সেভেনে থাকাকালীন আলোকদিয়ার মাঠে সাকিব গিয়েছিলেন ভাড়ায় খেলতে। বিধ্বংসী ব্যাটিং আর পেস বোলিংয়ে নজর কাড়লেন সবার ভুল পড়ছেন না, ঠিকই পড়ছেন। শুরুর দিকে সাকিব আল হাসান কিন্তু পেসারই ছিলেন।
আলোকদিয়ার মাঠের সেই খেলায় আম্পায়ার ছিলেন সাদ্দাম হোসেন গোর্কি। তিনি আবার স্থানীয় পর্যায়ের একজন কোচও।সাকিবের খেলা তাকে দারুণ মুগ্ধ করল। এই মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটাতে সাদ্দাম হোসেন সাকিবের মেধাকে কাজে লাগাতে চাইলেন। তার পরামর্শে সাকিব মাগুরায় ইসলামপুরপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দেন। এটি মাগুরা লিগের একটি পরিচিত দল। এর আগ পর্যন্ত সাকিবের সব খেলা হয়েছিল টেপড টেনিস বলে। তখনো পর্যন্ত সাকিব আসল ক্রিকেট বলের দেখাই পাননি। সেখানেও নতুন ক্রিকেট বলে প্রথমে পেস বোলিং শুরু করেন সাকিব। জোরে বল করার মধ্যে আলাদা মজা পেতেন সাকিব। কিন্তু তার কোচ সাদ্দাম হোসেন সাকিবকে স্পিন বল শুরু করতে বলেন। সত্যিকার ক্রিকেট বল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে করা সাকিবের প্রথম বলটি ছিল স্পিন বল। এবং প্রথম বলেই উইকেট পান সাকিব।সাকিব ২০০১ সালে বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমে মাগুরা জেলা থেকে নড়াইল ক্যাম্পের জন্য নির্বাচিত হন। নড়াইল ক্যাম্প থেকে ঢাকার বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য যে ২০ জন সুযোগ পেয়েছিল, সাকিব তাদেরই একজন। তখনই আসলে সাকিবের মূল ক্যারিয়ারের শুরু।বিকেএসপিতে ভর্তির পর বাংলাদেশের হয়ে বয়সভিত্তিক দলগুলোতে [অনূর্ধ-১৫-১৭-১৯] খেলার সুযোগ পান। আর সেখানেই মেধার স্বাক্ষর রাখেন সাকিব। পনেরো বছর বয়সে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলা সাকিব আসলে তখনই জাতীয় দলে কড়া নাড়ছিলেন।
সহ-অধিনায়কত্ব ও অধিনায়কত্বকাল
২০০৯ এর শুরুতে বাংলাদেশের টানা কয়েকটি হার এবং দীর্ঘ রানখরার কারণে আশরাফুলের অধিনায়কত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। তখন থেকেই বিসিবি সাকিবকে জাতীয় দলের 'সম্ভাব্য কর্ণধার' হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করে। বিসিবি অবশ্য এতো দ্রুত সাকিবের কাঁধে অধিনায়কত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার পক্ষপাতি ছিল না। পরবর্তীতে 'টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ,২০০৯' এর প্রথম পর্বেই বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও ভারতের কাছে হেরে বিদায় নেবার ফলে আশরাফুলের অধিনায়কত্বের বিষয়টি আবার সামনে চলে আসে। জুন, ২০০৯ এর মাশরাফিকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়, সাকিবকে করা হয় সহ-অধিনায়ক।জুলাই মাসে বাংলাদেশ ওয়েস্ট-ইন্ডিজ সফরে যায়। প্রথম টেস্টেই মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। খেলার শেষ দিনে তিনি মাঠেই নামতে পারেননি এবং তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করেন সাকিব। অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে সাকিব যেন নতুন রূপে জ্বলে ওঠেন।তিনি ও মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাকের নেতৃত্ব দেন এবং দু'জনে মিলে মোট ১৩টি উইকেট তুলে নিয়ে দেশকে এক ঐতিহাসিক জয় এনে দেন।দেশের বাইরে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। ওয়েস্ট-ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম এবং সর্বসাকুল্যে দ্বিতীয় টেস্ট বিজয়।
ওয়েস্ট-ইন্ডিয়ান দলটি অবশ্য খানিকটা অনভিজ্ঞ ছিল। বেতনাদি নিয়ে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ও 'খেলোয়াড় সংগঠনের' মধ্যে রেষারেষি চলছিল। দলের প্রথম একাদশ এ সিরিজটি বর্জন করে এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি দল মাঠে খেলতে নামে।
সাতজন খেলোয়াড়ের টেস্ট অভিষেক হয় এই ম্যাচে। দলের নেতৃত্ত্বে ছিলেন ফ্লয়েড রেইফার , যিনি কিনা শেষ ১০ বছরে মাত্র ৪টি টেস্ট খেলেছিলেন। মাশরাফির ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতির কারণে সিরিজের বাকি সময়টা সাকিবই বাংলাদেশকে নেতৃত্ত্ব দেন। ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ও ইতিহাসের পঞ্চম কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। সাকিবের নেতৃত্ত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টও জিতে নেয় এবং দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়। ব্যাট হাতে ১৬ ও ৯৬* রান করে এবং বল হাতে ৫৯/৩ ও ৭০/৫ উইকেট নিয়ে সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজ-দুটো পুরস্কারই নিজের ঝুলিতে পুরেন। গোটা সিরিজে তিনি ৫৩.০০ গড়ে ১৫৯ রান করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হন এবং ১৮.৭৬ গড়ে ১৩ উইকেট নিয়ে কেমার রোচের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জেতার পর বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজও ৩-০ তে জেতে। সিরিজে সাকিব দুটি হাফ-সেঞ্চুরি করেন। ব্যাটিং গড় ছিল ৪৫.০০ ও ৪৮.০০ গড়ে তিনি দুটো উইকেটও নেন। এই অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্য ওয়ানডে সিরিজেও তিনি 'সেরা খেলোয়াড়ে'র খেতাব জিতে নেন।মাশরাফি আহত অবস্থায় থাকায় সাকিবকেই আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে অধিনায়ক পদে বহাল রাখা হয়। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সাকিব মাত্র ৬৪ বলে ১০৪ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে ও দলকে ২-০ তে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন। সাকিব সিরিজ শেষ করেন ৪২.৫০ গড়ে ১৭০ রান করে, পঞ্চম সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে।৩৯.৬৬ গড়ে নেন মোট ৬ট উইকেট। ৪-১ এ সিরিজ জয় শেষে কুঁচকির ব্যথা সারানোর জন্য সাকিব অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান।ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই ব্যথাটা তাকে ভোগাচ্ছিল। ব্যথাকে উপেক্ষা করেই তিনি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবার সিদ্ধান্ত নেন।পুরো বছর জুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে সাকিব আইসিসি কর্ত্ক 'টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯' ও 'ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯' এর জন্য মনোনীত হন। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশী যিনি এ ধরনের ক্যাটাগরীতে মনোনয়ন পেয়েছেন।
২০০৯ এর সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হয় যে, পরের মাসে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফি-ই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন এবং সাকিব আবারও সহ-অধিনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।কিন্তু মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরি থেকে সময়মত সেরে উঠতে না পারায় সাকিবকেই অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। উদ্বোধনী খেলায় হারলেও সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায় এবং ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় ।নভেম্বর মাসে ' দ্য উইজডেন ক্রিকেটার্স' সাকিবকে ' বছরের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার ' ঘোষণা করে।২০১০-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে ইংল্যান্ড। সবগুলো ম্যাচেই ইংল্যান্ড জয় পায়। টেস্ট ও ওয়ানডে- দুটোতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন সাকিব (টেস্টে ৯ উইকেট ও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট)। দ্বিতীয় টেস্টের দু'ইনিংসে সাকিব যথাক্রমে ৪৯ ও ৯৬ রান করেন এবং ১২৪ রান দিয়ে নেন ৪টি উইকেট। দুটো টেস্টই শেষ দিন পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ম্যাচের তৃতীয় দিনে আম্পায়ারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত অবশ্য যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক হারের জন্য সাকিব আম্পায়ারদের পরোক্ষভাবে দোষারোপ করেন ।সে বছরই মে মাসে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ট্যুরে যায়। এবারও বাংলাদেশ ২-০তে টেস্ট সিরিজ হারে এবং ৮টি উইকেট নিয়ে সাকিব সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে দিয়ে বাংলাদেশ 'এশিয়া কাপ, ২০১০' খেলার উদ্দেশ্যে শ্রীলঙ্কা যায়।
তিনটি ম্যাচের প্রতিটিতেই বাংলাদেশ হারে। সাকিব ও শফিউল ৫টি করে উইকেট নিয়ে যৌথভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন।অধিনায়ক হিসেবে সাকিব নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। সেই সাথে অল-রাউন্ডার হিসেবেও নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন।
এই দ্বিবিধ জটিলতার কারণে জুলাই মাসে সাকিব অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। দলের দায়িত্ব পুণরায় মাশরাফির কাঁধে বর্তায়। ব্যাপারটাকে সিডন্স ব্যাখ্যা করেন এভাবে, "দেখুন, সাকিব বুঝেশুনেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। ব্যাটিংয়ে ওর ফর্মটা খারাপ যাচ্ছিল।
ওর একটু রেস্ট দরকার।" শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে এসে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারাতে সমর্থ হয়। বাংলাদেশ সিরিজ হারে ২-১ এ। ইংল্যান্ড সফর শেষে বাংলাদেশের আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি এবং স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১টি করে ওয়ানডে খেলার কথা ছিল। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয় এবং আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড-উভয়ের কাছেই বাংলাদেশ হারে।জুলাই মাসে সাকিব পূর্ব-নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী ইংল্যান্ডের সেকেন্ড ডিভিশন কাউন্টি দল ওরচেস্টারশায়ারে যোগ দেন। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশী যিনি কাউন্টিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।অক্টোবর, ২০১০ এ পাঁচ ওয়ানডে'র একটি সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে আসে। প্রথম ম্যাচেই মাশরাফি অ্যাংকেল ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। ফলশ্রুতিতে সাকিব অধিনায়কের দায়িত্ব নেন। সাকিব একেবারে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন। ব্যাট হাতে করেন ৫৮রান, বল হাতে নেন ৪টি উইকেট। দল জেতে ৯ রানে।চতুর্থ ম্যাচে সাকিব আবারও শতক হাঁকান এবং তিন উইকেট নিয়ে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ৪-০তে। পূর্ণশক্তির কোন টেস্ট খেলুড়ে দলের বিরুদ্ধে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। ২১৩ রান করে সাকিব সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোরার হন এবং ১১ উইকেট নিয়ে হন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী।ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে। মাশরাফি ততদিনে ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন। তবুও সাকিবকেই দলের অধিনায়ক পদে বহাল রাখা হয়।
প্রথম ম্যাচে পরাজয়র পর প্রেস কনফারেন্সে সাকিব বলেন, "দায়িত্বটা নিতে আমি ঠিক মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না এবং অধিনায়ক হিসেবে আমার ভূমিকা নিয়েও আমি সন্তুষ্ট না।সিরিজের বাকি তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ জয় পায় , একটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। ১৫৬ রান করে সাকিব বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হন, বল হাতে নেন ৯টি মূল্যবান উইকেট।২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসরের পর সাকিব দ্বিতীয়বারের মত টি২০ দলের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে মুশফিকুর রহিমকেও টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে সাকিবকে পুনরায় টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ বাংলাদেশ ত্রি-দেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ও ব্যাট হাতে ৩৭ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার অর্জন করেন এবং তার দল ৮ উইকেটের জয় পায়। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি ব্যাট হাতে ৬৭ রান করে ও বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার লাভ করেন এবং তার দল ১৬৩ রানের জয় পায়। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি পুনরায় ৩ উইকেট তুলে নেন এবং তার দল ৯১ রানে জয় লাভ করে। এই সিরিজে তিনি আঙ্গুলে আঘাত পান এবং কয়েক দিনের জন্য বিশ্রামে যান।
তার অনুপস্থিতিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তার স্থলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ ও ২০১৮ নিদহাস ট্রফিতে অধিনায়কত্ব করেন।অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের প্রথম সফর ছিল জুলাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে।২০১৭ সালের ২৮শে আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার মধ্য দিয়ে সাকিব ৪র্থ বোলার হিসেবে সকল টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড ব্যতীত, যারা এই বছরের শুরুতে টেস্ট খেলার মর্যাদা অর্জন করে) ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন।তিনি প্রথম ইনিংসে অর্ধ-শতকও করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ব্যাট হাতে মাত্র ৮ রান করেন, কিন্তু বল হাতে আরও ৫ উইকেট তুলে নিয়ে তার প্রথম ১০ উইকেট পান এবং ম্যাচটি জয়লাভ করেন। যাই হোক, সিরিজ শেষে তিনি সীমিত ওভারের খেলায় মনযোগ দেওয়ার জন্য টেস্ট থেকে বিরতি নেন।২০১৮ সালের অক্টোবর তিনি ঢাকা ডায়নামাইটস দলে অন্তর্ভুক্ত হন এবং অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
মাসিক আয়
দেশ সেরা এই ক্রিকেটার শুধু ক্রিকেট মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও সমান জনপ্রিয়। তারই প্রমাণ
পাওয়া যায় তার মাসিক এবং বার্ষিক আয়ের পরিমাণ দেখে। দেশের ক্রিকেটের ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে ওঠা সাকিব বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। শুধু তাই নয় দেশের অন্যতম ধনী ব্যক্তির তালিকাতেও তার নাম রয়েছে।সম্প্রতি ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করা ক্রিকেট ট্র্যাকার নামের একটি ওয়েবসাইট সাকিবের মাসিক এবং বার্ষিক আয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা দেখে যে কারো চোখ কপালে উঠতে বাধ্য!তালিকা অনুযায়ী বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের মাসিক আয় প্রায় ২২ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং বছরে ২৭৫ কোটি টাকা। বিশ্বের প্রায় সবকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে সমানভাবে খেলেছেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
মোট সম্পদের পরিমাণ
সাকিব আল হাসান কত কোটি টাকার মালিক?
দশ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম সাকিব আল-হাসান। আর হবেন না-ই বা কেন? মাত্র ৯ বছরেই তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বের ১ নাম্বার অল-রাউন্ডার হিসেবে। শুধু তাই নয়, সাকিব এখন বাংলাদেশের শীর্ষ ধনী খেলোয়াড়, যার সম্পদের পরিমান পৌনে তিনশ’কোটি টাকারও বেশি।একসময় ক্রিকেটে ধনী খেলোয়াড় বলতেই চোখে ভাসতো ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছবি। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তাদের চাইতে খুব পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ হয়েই গেল। বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার হিসেবে আখ্যায়িত সাকিবের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৬১ লাখ টাকার মত।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকেট ট্র্যাকারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সাকিবের আয়ের এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের প্রায় সব কটি বড়-বড়, টি-টোয়েন্টি লিগে খেলা থেকে আয়, এবং বাংলাদেশ বোর্ডের চুক্তি, অনুযায়ী খেলার পাশাপাশি মডেলিং এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত সাকিব আল হাসান। এই সমস্ত আয় থেকে কয়েক বছরে সাকিবের সম্পদের পরিমাণ পৌণে তিনশ’ ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করে ক্রিকেট ট্র্যাকার।গত বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে বেতন হিসেবে প্রতি মাসে সাকিব আল হাসান পেয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা করে। এ বছর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হচ্ছে তার বেতন। পারিশ্রমিক হিসেবে প্রতি ম্যাচে ফি পেয়েছেন লাখ টাকার উপরে। এ ছাড়া দৈনিক ভাতা তো আছেই।
বাংলাদেশে বিপিএলেও সাকিবের আয় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছিলেন সাকিব। সর্বশেষ আসরে রংপুর রাইডার্স থেকে পেয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা।ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন সাকিব। ২০১১ সালে আইপিএলে কিং খানের কেকেআর সাকিবকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারে কিনে নেয়। ২০১৬ সালেও কলকাতায় খেলেছেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। সাকিবকে রেখে দেওয়ায় আরো ২ কোটি ৮০ হাজার রুপি বেশি গুণতে হচ্ছে কেকেআরকে।আইপিএল ও বিপিএলের মতো পিএসএলেও সাকিব এগিয়ে। পিএসএলে প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে থাকা সাকিব খেলেন করাচি কিংসের হয়ে। এজন্য পেয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ ছাড়া বিগ ব্যাশ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, এসএলপিএল ও ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট থেকেও হাজারো ডলার আয় করেছেন সাকিব।ব্যক্তিগত ব্যবসাতেও সাকিব সফল। যমুনা ফিউচার পার্কে সাকিবের নিজস্ব কসমেটিকসের দোকান কসমিক জোভিয়ান, বনানীতে নিজের রেস্টুরেস্ট সাকিব‘স ডাইন এরই মধ্যে লাভের মুখ দেখেছেন। ‘ফিয়েস্তা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের।ক্রিকেটের বাইরেও সাকিবের আয় আকাশচুম্বি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যদূত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন সাকিব। পেপসি, ক্যাস্ট্রল, নর্টন অ্যান্টিভাইরাস, বুস্ট, লাইফবয়, লা রিভ, লেনেভো, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, বাংলালিংক, রানার মোটরসাইকেল, জা এন জি আইসক্রিম, টিফিন বিস্কুটস, সিঙ্গার ইলেকট্রনিকসের বিজ্ঞাপনী দূত হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ পেয়েছেন সাকিব।শুধুমাত্র মাঠেই নয়, মাঠের বাহিরেও সমানভাবে ছুটে চলেছে সাকিবের জয়জয়কার। তাইতো মাত্র ক’বছরেই বিশ্বের ১ নাম্বার অল-রাউন্ডার তো বটেই, সেই সাথে সাকিব নিজেকে বানিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশের ১ নাম্বার ধনী খেলোয়াড়।যেভাবে ছুটে চলছে সাকিবের জয়রথ, কে জানে আগামী দশ বছরে সাকিব শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যেই না, বরং পুরো বাংলাদেশের সেরা ১০ ধনীর তালিকায় আসবেন কি না! বর্তমান সময় যা বলছে, তা অনুসারে সেটি হতেও আর খুব বেশি দেরি নেই।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাকিবের কীর্তি ও অর্জন
►২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তিনি ২৫০ ওয়ানডে উইকেট অর্জনকারী এবং দ্রুততম এবং পঞ্চম খেলোয়াড় হিসাবে ৫০০০ রানের মালিক এবং মাত্র ১৯৯ ম্যাচে ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেট শিকারকারী হয়ে ওঠেন। (অন্য ক্রিকেটার হলেন আবদুল রাজ্জাক, সনথ জয়সুরিয়া, জ্যাক ক্যালিস এবং শহীদ আফ্রিদি) ।
►সাকিব টি-টোয়েন্টিতে ৪,০০০ রান এবং ৩০০ উইকেট নিয়ে মাত্র তিন ক্রিকেটারের একজন। তিনি এই মাইলফলকটি ২৬০ ম্যাচে অর্জন করেছিলেন, দ্রুততম যে দুটি নম্বর অর্জন করেছিলেন, শহীদ আফ্রিদি (২৮৩) এবং ডোয়াইন ব্রাভো (২৯২)।
►সাকিব সবচেয়ে দ্রুত ১১,০০০ রান এবং ৫০০ উইকেট পেয়েছেন ।
►২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে, সাকিব ওয়ানডেতে ৬,০০০ রান এবং ২৫০ উইকেট এবং ডাবল অর্জনের জন্য সামগ্রিক চতুর্থ ক্রিকেটারের পক্ষে ইনিংসের দিক থেকে দ্রুততম অলরাউন্ডার হয়েছিলেন।
►আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে সাকিব বেশ কয়েকটি মাইলফলক অর্জন করেছেন।
►সাকিব বিশ্বকাপে এক হাজার রান সংগ্রহকারী প্রথম বাংলাদেশী এবং বিশ্বকাপে পাঁচ উইকেট শিকারকারী বাংলাদেশ থেকে প্রথম হয়েছেন।
►বিশ্বকাপের একমাত্র ক্রিকেটার হিসাবে তিনি এক হাজার রান করেছিলেন এবং বিশ্বকাপে ৩০ উইকেট শিকার করেছেন এবং বিশ্বকাপের একক টুর্নামেন্টে ৬০০ রান ও ১০ উইকেট শিকার করেছেন।
►যুবরাজ সিংয়ের পরে তিনি দ্বিতীয় ক্রিকেটার হয়ে ৫০ রান করেছিলেন এবং বিশ্বকাপের ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করেছেন।
►ভারতের বিপক্ষে ২০১২ বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে সাকিব বিশ্বকাপের একক টুর্নামেন্টে ৫০০ রান সংগ্রহকারী এবং ১০ উইকেট অর্জনকারী প্রথম ক্রিকেটার হয়েছেন।
►পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১২ বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে সাকিব একক বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে (৭) সর্বোচ্চ ৫০+ রানের রেকর্ড শচীন টেন্ডুলকারের সমান করে দিয়েছিলেন। এবং একক বিশ্বকাপে বিশ্বের প্রথম বাংলাদেশী এবং তৃতীয় খেলোয়াড় হয়ে ৬০০ রানের বেশি রান করেছেন।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
Shakib Al Hasan Lifestory/Shakib Al Hasan Lifestyle/Shakib Al Hasan Biography/Info.
ব্যক্তিগত তথ্য
Sakib Al Hasan |
জন্মঃ ২৪ মার্চ, ১৯৮৭ (বয়স ৩৩ বছর)
জন্ম স্থানঃ মাগুরা, খুলনা, বাংলাদেশ।
ডাকনামঃসাকিব, ফয়সাল , ময়না।
উচ্চতাঃ ৫ ফুট ০৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার)।
বাবার নামঃমোঃমাশরুর রেজা
মায়ের নামঃ মোছাঃশিরিন শারমিন
স্ত্রীঃ উম্মে আহমেদ শিশির
শিশুঃ অলআইনা হাসান আব্রি
দলঃবাংলাদেশ, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার, বাংলাদেশ ‘এ’ দল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশ, বার্বাডোস ট্রাইডেন্টস, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস, ঢাকা আবাহনী,
ঢাকা মোহামেডান, লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ, জ্যামাইকা তাল্লাওয়াস, করাচি কিংস, খুলনা ডিভিশন, কলকাতা নাইট রাইডার্স, পেসোয়ার জালমি, সানরাইজার্স হাইদ্রাবাদ, ওরচেস্টারশায়ার।
জন্ম ও শৈশব
সাকিব আল হাসান ১৯৮৭ সালের ২৩শে মার্চ মাগুরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাশরুর রেজা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মাতা শিরিন শারমিন একজন গৃহিণী।তরুণ বয়সেই সাকিব খেলা পাগল ছিলেন।
সাকিবের প্রেম ও বিয়ে
গল্প নয়, সত্যি- বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জীবনেও প্রেম ধরা দিয়েছিল।তবে তা ফেসবুকে। যাকে নিয়ে সংসার পেতেছেন, সেই উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে পরিচয় নেটের জগতে। এবার তাহলে চলুন ফেসবুকের দিনগুলোর সেই প্রেমের গল্পটা শুনে নেই।পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে থাকতেন শিশির। তখন পড়াশোনা করছিলেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও শিশিরের জন্ম ঢাকায়, বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর আগে তাঁর বাবা অগ্রণী ব্যাংকের চাকুরে ছিলেন। ১০ বছর বয়সে বাবা-মা’র সঙ্গে চলে যান মার্কিনমুল্লুকে। শিশিরের পরিবারে আছেন বাবা-মা, চার ভাই ও দুই বোন। সবাই থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটিতে দিন কাটছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা পেয়ে গেলেন সাকিবের। বদলে গেল জীবন। যদিও ক্রিকেট খেলাটা তেমন টানতো না তাকে। তারপরও নামটা জানতেন। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পরীক্ষা শেষ করে ২০১০ সালে বেড়াতে যান ইংল্যান্ডে। তখন সেখানে কাউন্টি ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। কোন এক অনুষ্ঠানে চোখে চোখ পড়তেই শুরু সিনেমার গল্পের মতো মুগ্ধতা।কাউন্টির দল ওস্টারশায়ারে খেলতে থাকা সাকিব ভাবেননি এই মেয়েটিই একদিন তার ঘরণী হবেন। কিন্তু নিজেদের অজান্তেই একটু একটু করে ভালা লাগা থেকেই জন্ম নিল ভালোবাসা। তবে মন বিনিময় আরো পরে।অন্তর্জাল আর মুঠোফোনই তখন তাদের সম্পর্কের সেতু তৈরি করে দিয়েছিল। ওস্টারশায়ারের হয়ে মিশন শেষে দেশে ফেরেন সাকিব। অন্যপ্রান্তে শিশির তখন ব্যস্ত পড়াশোনায়। চলে যান উইসকনসিনে।সাকিব খেলায় মন দেন। শিশির ইউনিভার্সিটির ব্যস্ত সূচিতে। তারপরও কোনো ব্যস্ততাই তাঁদেরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে পারেনি।
এভাবেই দিন কাটতে থাকল, একসময় গাঢ় হতে থাকে তাদের প্রেম। বাংলাদেশের ‘মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর’ ভাবতে থাকেন বিয়ের কথা। কিন্তু বিয়ে তো শুধুই দুজনের সম্পর্ক নয়। বিয়ে দুটো পরিবারেরও।পারিবারিকভাবেই এগিয়েছে বাকি আলোচনা। ঠিক হয় বিশেষ দিনে বিয়ে হবে তাদের। তারিখ ঠিক করা হয় ২০১২ ডিসেম্বরের ১২ তারিখ। বিশেষ দিনই তো- ১২.১২.১২! রূপসী বাংলা হোটেলে ২০ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয় তাদের। বিয়েতে সাকিব পড়েন সাদা পাঞ্জাবি আর শিশির লাল টুকটুকে শাড়ি!এখন অহর্নিশ সুখের ভেলায় ভাসছেন সাকিব-শিশির। সংসারে এসেছে নতুন অতিথি। মিষ্টি ছোট্ট কন্যা আলাইনা হাসান অব্রেকে নিয়েই সময় কেটে যাচ্ছে এই দুই সেলিব্রেটির। কোনো কোনো সফরে এখন স্ত্রী-সন্তানকে পাশে রাখছেন সাকিব। সাফল্যও পাচ্ছেন তিনি। ভালবাসার মানুষ পাশে থাকলে বুঝি সব লড়াই সহজ হয়ে উঠে!মজার ব্যাপার হলো, শিশির শুরুতে ক্রিকেট একদম বুঝতো না, সে সাকিবের খেলা দেখে বলে, আচ্ছা তোমার গায়ে কি শক্তি নাই, তুমি কেন আস্তে আস্তে বল করো, অন্যদের মত দৌড়ে গিয়ে জোরে বল করতে পারো না।। ভাবুন একবার, বিশ্বসেরা স্পিন অলরাউন্ডারের বউয়ের কথার কি বাহার!!তারপর শিশির বলতো- আমি বুঝি না তুমি ব্যাট দিয়ে জোরে মারো, আবার মাঝে মাঝে আস্তে মেরে ক্যাচ কেনো তুলে দাও?? আমি ক্যাচ আউট একদম সহ্য করতে পারি না, আরেকটু জোরে মারলেই তো সোজা বল দূরে চলে যায়।। শিশিরের কথা হলো, মারলে তুমি সর্ব শক্তি দিয়েই মারবা, নইলে বল শুধু নিচ দিয়ে মারবা, উপরে তোলার দরকার নেই।। আহা রে, বেচারী বউকে কে বোঝাবে- ক্রিকেটে ব্যাটে বলে টাইমিং বলে যে একটা জিনিস আছে।।সাকিব মাঝে মাঝে চিৎকার করে শিশিরকে ডেকে বলে- এই এদিকে আসো, তাড়াতাড়ি আসো।। শিশির হয়তো হন্তদন্ত হয়ে সাকিবের কাছে ছুটে যায়, সাকিব মোবাইল বা ল্যাপটপ দেখিয়ে বলে মেসির এই ড্রিবলিংটা জোস না।। শিশির অবাক হয়ে ভাবে, একটা মানুষ এতটা মেসি ভক্ত কিভাবে হয়।। সাকিব নাকি সারাদিনই অবসরে হয় মুভি নয়তো মেসির ভিডিও দেখে।। সাকিবের একটা অন্যতম ইচ্ছা, ন্যু’ক্যাম্পে গিয়ে মেসির খেলা দেখা।
ক্রিকেটে তার পথ চলা
মাগুরায় তাকে সবাই ফয়সাল নামেই চেনে। পরিবারের মানুষজনের কাছে এখনো তিনি ফয়সালই। অনেকেই জানেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ডাক নাম ফয়সাল। সাকিবের বাবা মাশরুর রেজা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মাতা শিরিন শারমিন একজন গৃহিণী।
পারিবারিক বলয়ের কারণে ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল ছিলেন সাকিব। তবে সেই বলয়ের কারণে সাকিবের হওয়ার কথা ছিল ফুটবলার।সাকিবের বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে এবং এক কাজিন
বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতেন। কিন্তু সাকিবের গন্তব্য ছিল ভিন্ন দিকে। একজন ক্রিকেটার সারা বিশ্ব কাঁপানোর যে অদৃষ্টের লিখন ছিল, সাকিব সেদিকেই হাঁটছিলেন।সাকিবের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে ফুটবলার হোক। একটা সময় সাকিব নিজেও ফুটবলার হতে চাইতেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জয় করে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলে সারা দেশে শুরু হওয়া ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত হলেন সাকিবও। তাই শেষ পর্যন্ত সাকিব ক্রিকেটকেই বেছে নিলেন। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।২০০১ সালের দিকে ক্লাস সেভেনে থাকাকালীন আলোকদিয়ার মাঠে সাকিব গিয়েছিলেন ভাড়ায় খেলতে। বিধ্বংসী ব্যাটিং আর পেস বোলিংয়ে নজর কাড়লেন সবার ভুল পড়ছেন না, ঠিকই পড়ছেন। শুরুর দিকে সাকিব আল হাসান কিন্তু পেসারই ছিলেন।
আলোকদিয়ার মাঠের সেই খেলায় আম্পায়ার ছিলেন সাদ্দাম হোসেন গোর্কি। তিনি আবার স্থানীয় পর্যায়ের একজন কোচও।সাকিবের খেলা তাকে দারুণ মুগ্ধ করল। এই মুগ্ধতার প্রকাশ ঘটাতে সাদ্দাম হোসেন সাকিবের মেধাকে কাজে লাগাতে চাইলেন। তার পরামর্শে সাকিব মাগুরায় ইসলামপুরপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দেন। এটি মাগুরা লিগের একটি পরিচিত দল। এর আগ পর্যন্ত সাকিবের সব খেলা হয়েছিল টেপড টেনিস বলে। তখনো পর্যন্ত সাকিব আসল ক্রিকেট বলের দেখাই পাননি। সেখানেও নতুন ক্রিকেট বলে প্রথমে পেস বোলিং শুরু করেন সাকিব। জোরে বল করার মধ্যে আলাদা মজা পেতেন সাকিব। কিন্তু তার কোচ সাদ্দাম হোসেন সাকিবকে স্পিন বল শুরু করতে বলেন। সত্যিকার ক্রিকেট বল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে করা সাকিবের প্রথম বলটি ছিল স্পিন বল। এবং প্রথম বলেই উইকেট পান সাকিব।সাকিব ২০০১ সালে বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রমে মাগুরা জেলা থেকে নড়াইল ক্যাম্পের জন্য নির্বাচিত হন। নড়াইল ক্যাম্প থেকে ঢাকার বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য যে ২০ জন সুযোগ পেয়েছিল, সাকিব তাদেরই একজন। তখনই আসলে সাকিবের মূল ক্যারিয়ারের শুরু।বিকেএসপিতে ভর্তির পর বাংলাদেশের হয়ে বয়সভিত্তিক দলগুলোতে [অনূর্ধ-১৫-১৭-১৯] খেলার সুযোগ পান। আর সেখানেই মেধার স্বাক্ষর রাখেন সাকিব। পনেরো বছর বয়সে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে খেলা সাকিব আসলে তখনই জাতীয় দলে কড়া নাড়ছিলেন।
সহ-অধিনায়কত্ব ও অধিনায়কত্বকাল
Sakib/Mash |
ওয়েস্ট-ইন্ডিয়ান দলটি অবশ্য খানিকটা অনভিজ্ঞ ছিল। বেতনাদি নিয়ে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ও 'খেলোয়াড় সংগঠনের' মধ্যে রেষারেষি চলছিল। দলের প্রথম একাদশ এ সিরিজটি বর্জন করে এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি দল মাঠে খেলতে নামে।
সাতজন খেলোয়াড়ের টেস্ট অভিষেক হয় এই ম্যাচে। দলের নেতৃত্ত্বে ছিলেন ফ্লয়েড রেইফার , যিনি কিনা শেষ ১০ বছরে মাত্র ৪টি টেস্ট খেলেছিলেন। মাশরাফির ইনজুরিজনিত অনুপস্থিতির কারণে সিরিজের বাকি সময়টা সাকিবই বাংলাদেশকে নেতৃত্ত্ব দেন। ২২ বছর ১১৫ দিন বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ ও ইতিহাসের পঞ্চম কনিষ্ঠতম অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। সাকিবের নেতৃত্ত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্টও জিতে নেয় এবং দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়। ব্যাট হাতে ১৬ ও ৯৬* রান করে এবং বল হাতে ৫৯/৩ ও ৭০/৫ উইকেট নিয়ে সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজ-দুটো পুরস্কারই নিজের ঝুলিতে পুরেন। গোটা সিরিজে তিনি ৫৩.০০ গড়ে ১৫৯ রান করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হন এবং ১৮.৭৬ গড়ে ১৩ উইকেট নিয়ে কেমার রোচের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। টেস্ট সিরিজ ২-০ তে জেতার পর বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজও ৩-০ তে জেতে। সিরিজে সাকিব দুটি হাফ-সেঞ্চুরি করেন। ব্যাটিং গড় ছিল ৪৫.০০ ও ৪৮.০০ গড়ে তিনি দুটো উইকেটও নেন। এই অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্য ওয়ানডে সিরিজেও তিনি 'সেরা খেলোয়াড়ে'র খেতাব জিতে নেন।মাশরাফি আহত অবস্থায় থাকায় সাকিবকেই আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে অধিনায়ক পদে বহাল রাখা হয়। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সাকিব মাত্র ৬৪ বলে ১০৪ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর গড়তে ও দলকে ২-০ তে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন। সাকিব সিরিজ শেষ করেন ৪২.৫০ গড়ে ১৭০ রান করে, পঞ্চম সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে।৩৯.৬৬ গড়ে নেন মোট ৬ট উইকেট। ৪-১ এ সিরিজ জয় শেষে কুঁচকির ব্যথা সারানোর জন্য সাকিব অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান।ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই ব্যথাটা তাকে ভোগাচ্ছিল। ব্যথাকে উপেক্ষা করেই তিনি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবার সিদ্ধান্ত নেন।পুরো বছর জুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে সাকিব আইসিসি কর্ত্ক 'টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯' ও 'ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার, ২০০৯' এর জন্য মনোনীত হন। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশী যিনি এ ধরনের ক্যাটাগরীতে মনোনয়ন পেয়েছেন।
২০০৯ এর সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হয় যে, পরের মাসে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে সিরিজে মাশরাফি-ই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন এবং সাকিব আবারও সহ-অধিনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।কিন্তু মাশরাফি হাঁটুর ইনজুরি থেকে সময়মত সেরে উঠতে না পারায় সাকিবকেই অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। উদ্বোধনী খেলায় হারলেও সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায় এবং ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় ।নভেম্বর মাসে ' দ্য উইজডেন ক্রিকেটার্স' সাকিবকে ' বছরের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার ' ঘোষণা করে।২০১০-এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে দুই টেস্ট ও তিন ওয়ানডে খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে ইংল্যান্ড। সবগুলো ম্যাচেই ইংল্যান্ড জয় পায়। টেস্ট ও ওয়ানডে- দুটোতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন সাকিব (টেস্টে ৯ উইকেট ও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট)। দ্বিতীয় টেস্টের দু'ইনিংসে সাকিব যথাক্রমে ৪৯ ও ৯৬ রান করেন এবং ১২৪ রান দিয়ে নেন ৪টি উইকেট। দুটো টেস্টই শেষ দিন পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ম্যাচের তৃতীয় দিনে আম্পায়ারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত অবশ্য যথেষ্ট বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক হারের জন্য সাকিব আম্পায়ারদের পরোক্ষভাবে দোষারোপ করেন ।সে বছরই মে মাসে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ট্যুরে যায়। এবারও বাংলাদেশ ২-০তে টেস্ট সিরিজ হারে এবং ৮টি উইকেট নিয়ে সাকিব সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে দিয়ে বাংলাদেশ 'এশিয়া কাপ, ২০১০' খেলার উদ্দেশ্যে শ্রীলঙ্কা যায়।
তিনটি ম্যাচের প্রতিটিতেই বাংলাদেশ হারে। সাকিব ও শফিউল ৫টি করে উইকেট নিয়ে যৌথভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন।অধিনায়ক হিসেবে সাকিব নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। সেই সাথে অল-রাউন্ডার হিসেবেও নিজের সেরাটা দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন।
এই দ্বিবিধ জটিলতার কারণে জুলাই মাসে সাকিব অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। দলের দায়িত্ব পুণরায় মাশরাফির কাঁধে বর্তায়। ব্যাপারটাকে সিডন্স ব্যাখ্যা করেন এভাবে, "দেখুন, সাকিব বুঝেশুনেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। ব্যাটিংয়ে ওর ফর্মটা খারাপ যাচ্ছিল।
ওর একটু রেস্ট দরকার।" শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে এসে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডকে হারাতে সমর্থ হয়। বাংলাদেশ সিরিজ হারে ২-১ এ। ইংল্যান্ড সফর শেষে বাংলাদেশের আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি এবং স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১টি করে ওয়ানডে খেলার কথা ছিল। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয় এবং আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড-উভয়ের কাছেই বাংলাদেশ হারে।জুলাই মাসে সাকিব পূর্ব-নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী ইংল্যান্ডের সেকেন্ড ডিভিশন কাউন্টি দল ওরচেস্টারশায়ারে যোগ দেন। সাকিবই প্রথম বাংলাদেশী যিনি কাউন্টিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।অক্টোবর, ২০১০ এ পাঁচ ওয়ানডে'র একটি সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে আসে। প্রথম ম্যাচেই মাশরাফি অ্যাংকেল ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। ফলশ্রুতিতে সাকিব অধিনায়কের দায়িত্ব নেন। সাকিব একেবারে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন। ব্যাট হাতে করেন ৫৮রান, বল হাতে নেন ৪টি উইকেট। দল জেতে ৯ রানে।চতুর্থ ম্যাচে সাকিব আবারও শতক হাঁকান এবং তিন উইকেট নিয়ে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ৪-০তে। পূর্ণশক্তির কোন টেস্ট খেলুড়ে দলের বিরুদ্ধে এটাই বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। ২১৩ রান করে সাকিব সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোরার হন এবং ১১ উইকেট নিয়ে হন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী।ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে। মাশরাফি ততদিনে ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন। তবুও সাকিবকেই দলের অধিনায়ক পদে বহাল রাখা হয়।
প্রথম ম্যাচে পরাজয়র পর প্রেস কনফারেন্সে সাকিব বলেন, "দায়িত্বটা নিতে আমি ঠিক মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না এবং অধিনায়ক হিসেবে আমার ভূমিকা নিয়েও আমি সন্তুষ্ট না।সিরিজের বাকি তিনটি ম্যাচেই বাংলাদেশ জয় পায় , একটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। ১৫৬ রান করে সাকিব বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হন, বল হাতে নেন ৯টি মূল্যবান উইকেট।২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসরের পর সাকিব দ্বিতীয়বারের মত টি২০ দলের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে মুশফিকুর রহিমকেও টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে সাকিবকে পুনরায় টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ বাংলাদেশ ত্রি-দেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ও ব্যাট হাতে ৩৭ রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার অর্জন করেন এবং তার দল ৮ উইকেটের জয় পায়। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি ব্যাট হাতে ৬৭ রান করে ও বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার লাভ করেন এবং তার দল ১৬৩ রানের জয় পায়। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি পুনরায় ৩ উইকেট তুলে নেন এবং তার দল ৯১ রানে জয় লাভ করে। এই সিরিজে তিনি আঙ্গুলে আঘাত পান এবং কয়েক দিনের জন্য বিশ্রামে যান।
তার অনুপস্থিতিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তার স্থলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজ ও ২০১৮ নিদহাস ট্রফিতে অধিনায়কত্ব করেন।অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের প্রথম সফর ছিল জুলাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে।২০১৭ সালের ২৮শে আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার মধ্য দিয়ে সাকিব ৪র্থ বোলার হিসেবে সকল টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড ব্যতীত, যারা এই বছরের শুরুতে টেস্ট খেলার মর্যাদা অর্জন করে) ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন।তিনি প্রথম ইনিংসে অর্ধ-শতকও করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ব্যাট হাতে মাত্র ৮ রান করেন, কিন্তু বল হাতে আরও ৫ উইকেট তুলে নিয়ে তার প্রথম ১০ উইকেট পান এবং ম্যাচটি জয়লাভ করেন। যাই হোক, সিরিজ শেষে তিনি সীমিত ওভারের খেলায় মনযোগ দেওয়ার জন্য টেস্ট থেকে বিরতি নেন।২০১৮ সালের অক্টোবর তিনি ঢাকা ডায়নামাইটস দলে অন্তর্ভুক্ত হন এবং অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
মাসিক আয়
দেশ সেরা এই ক্রিকেটার শুধু ক্রিকেট মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও সমান জনপ্রিয়। তারই প্রমাণ
পাওয়া যায় তার মাসিক এবং বার্ষিক আয়ের পরিমাণ দেখে। দেশের ক্রিকেটের ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে ওঠা সাকিব বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। শুধু তাই নয় দেশের অন্যতম ধনী ব্যক্তির তালিকাতেও তার নাম রয়েছে।সম্প্রতি ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করা ক্রিকেট ট্র্যাকার নামের একটি ওয়েবসাইট সাকিবের মাসিক এবং বার্ষিক আয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা দেখে যে কারো চোখ কপালে উঠতে বাধ্য!তালিকা অনুযায়ী বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের মাসিক আয় প্রায় ২২ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং বছরে ২৭৫ কোটি টাকা। বিশ্বের প্রায় সবকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে সমানভাবে খেলেছেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার।
মোট সম্পদের পরিমাণ
সাকিব আল হাসান কত কোটি টাকার মালিক?
দশ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম সাকিব আল-হাসান। আর হবেন না-ই বা কেন? মাত্র ৯ বছরেই তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বের ১ নাম্বার অল-রাউন্ডার হিসেবে। শুধু তাই নয়, সাকিব এখন বাংলাদেশের শীর্ষ ধনী খেলোয়াড়, যার সম্পদের পরিমান পৌনে তিনশ’কোটি টাকারও বেশি।একসময় ক্রিকেটে ধনী খেলোয়াড় বলতেই চোখে ভাসতো ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছবি। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তাদের চাইতে খুব পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ হয়েই গেল। বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার হিসেবে আখ্যায়িত সাকিবের সম্পদের পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৬১ লাখ টাকার মত।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকেট ট্র্যাকারের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সাকিবের আয়ের এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের প্রায় সব কটি বড়-বড়, টি-টোয়েন্টি লিগে খেলা থেকে আয়, এবং বাংলাদেশ বোর্ডের চুক্তি, অনুযায়ী খেলার পাশাপাশি মডেলিং এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত সাকিব আল হাসান। এই সমস্ত আয় থেকে কয়েক বছরে সাকিবের সম্পদের পরিমাণ পৌণে তিনশ’ ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করে ক্রিকেট ট্র্যাকার।গত বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে বেতন হিসেবে প্রতি মাসে সাকিব আল হাসান পেয়েছেন ২ লাখ ১০ হাজার টাকা করে। এ বছর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হচ্ছে তার বেতন। পারিশ্রমিক হিসেবে প্রতি ম্যাচে ফি পেয়েছেন লাখ টাকার উপরে। এ ছাড়া দৈনিক ভাতা তো আছেই।
বাংলাদেশে বিপিএলেও সাকিবের আয় হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছিলেন সাকিব। সর্বশেষ আসরে রংপুর রাইডার্স থেকে পেয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা।ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন সাকিব। ২০১১ সালে আইপিএলে কিং খানের কেকেআর সাকিবকে ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলারে কিনে নেয়। ২০১৬ সালেও কলকাতায় খেলেছেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। সাকিবকে রেখে দেওয়ায় আরো ২ কোটি ৮০ হাজার রুপি বেশি গুণতে হচ্ছে কেকেআরকে।আইপিএল ও বিপিএলের মতো পিএসএলেও সাকিব এগিয়ে। পিএসএলে প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে থাকা সাকিব খেলেন করাচি কিংসের হয়ে। এজন্য পেয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ ছাড়া বিগ ব্যাশ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, এসএলপিএল ও ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট থেকেও হাজারো ডলার আয় করেছেন সাকিব।ব্যক্তিগত ব্যবসাতেও সাকিব সফল। যমুনা ফিউচার পার্কে সাকিবের নিজস্ব কসমেটিকসের দোকান কসমিক জোভিয়ান, বনানীতে নিজের রেস্টুরেস্ট সাকিব‘স ডাইন এরই মধ্যে লাভের মুখ দেখেছেন। ‘ফিয়েস্তা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের।ক্রিকেটের বাইরেও সাকিবের আয় আকাশচুম্বি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যদূত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছেন সাকিব। পেপসি, ক্যাস্ট্রল, নর্টন অ্যান্টিভাইরাস, বুস্ট, লাইফবয়, লা রিভ, লেনেভো, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক, বাংলালিংক, রানার মোটরসাইকেল, জা এন জি আইসক্রিম, টিফিন বিস্কুটস, সিঙ্গার ইলেকট্রনিকসের বিজ্ঞাপনী দূত হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ পেয়েছেন সাকিব।শুধুমাত্র মাঠেই নয়, মাঠের বাহিরেও সমানভাবে ছুটে চলেছে সাকিবের জয়জয়কার। তাইতো মাত্র ক’বছরেই বিশ্বের ১ নাম্বার অল-রাউন্ডার তো বটেই, সেই সাথে সাকিব নিজেকে বানিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশের ১ নাম্বার ধনী খেলোয়াড়।যেভাবে ছুটে চলছে সাকিবের জয়রথ, কে জানে আগামী দশ বছরে সাকিব শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যেই না, বরং পুরো বাংলাদেশের সেরা ১০ ধনীর তালিকায় আসবেন কি না! বর্তমান সময় যা বলছে, তা অনুসারে সেটি হতেও আর খুব বেশি দেরি নেই।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাকিবের কীর্তি ও অর্জন
►ওয়ানডেতে বাংলাদেশি জুটিতে যে কোনও উইকেটের সেরা পার্টনারশিপের রেকর্ড, মাহমুদউল্লাহ (২২৪)।(আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এটি এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ৫ তম উইকেটে রান)
►টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে একক মাঠে সর্বাধিক উইকেট নেওয়া (শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে, মিরপুরে ৭৬) খেলোয়াড় ।
►টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের চতুর্থ বোলার সকল টেস্ট খেলোয়াড় দেশের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট শিকার করেছেন (ডেল স্টেইন, মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং রাঙ্গনা হেরথের পরে)
►আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় অলরাউন্ডার ১০,০০০ রানের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন এবং ৫০০ উইকেট নিয়েছেন, এটি করা দ্রুততম।
►টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে একক মাঠে সর্বাধিক উইকেট নেওয়া (শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে, মিরপুরে ৭৬) খেলোয়াড় ।
►টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের চতুর্থ বোলার সকল টেস্ট খেলোয়াড় দেশের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট শিকার করেছেন (ডেল স্টেইন, মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং রাঙ্গনা হেরথের পরে)
►আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় অলরাউন্ডার ১০,০০০ রানের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন এবং ৫০০ উইকেট নিয়েছেন, এটি করা দ্রুততম।
►প্রথম স্পিন বোলার এবং সার্বিক তৃতীয় খেলোয়াড় (ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়াকার ইওনিস শারজাহ স্টেডিয়ামে ১০০+ করে প্রত্যেকে) একক মাঠে ১০০+ ওয়ানডে উইকেট শিকার করেছেন। (শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ১১২)
►২০১৭ সালে বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্টে তিনি ডাবল সেঞ্চুরি কররেন একমাত্র সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসাবে এবং যখন ২১৭ এবং ০ রান করেছিলেন তখন তিনি টেস্টে ডাক পান ।
►স্যার ইয়ান বোথাম ও ইমরান খানের পর এক ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং ১০ উইকেট শিকার করা বিশ্বের একমাত্র তৃতীয় অলরাউন্ডার।
►তিনটি ফরম্যাটেই ক্রিকেট ইতিহাসের #১ অলরাউন্ডার স্থান পেয়েছেন ।
►দ্রুততম অলরাউন্ডার হিসাবে ৩০০০ টেস্ট রান এবং ২০০ টেস্ট উইকেট (৫৪ টেস্ট) নিয়েছেন। ইয়ান বোথামকে যিনি ৫৫ টেস্ট ম্যাচে মাইলফলকে পৌঁছেছেন।
►দ্রুততম অলরাউন্ডার ৫০০০ ওয়ানডে রান সংগ্রহ এবং ২০০ ওয়ানডে উইকেট শিকার করেছেন।
► আন্তর্জাতিক উইকেট শিকারকারী প্রথম বাংলাদেশি বোলার।
►দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান ১০,০০০ আন্তর্জাতিক রান সংগ্রহ করেছে।
►বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক টেস্ট (২০৩ *) এবং টি -২০ (৮৫ *) উইকেট নেওয়া খেলোয়াড়।
►সাকিব একক মাঠে সর্বাধিক রান (১১০ ইনিংসে ৩৯৮০ রান) টেবিলের শীর্ষে রয়েছে এবং একক মাঠে সর্বাধিক উইকেট (১১০ ম্যাচে ১৯০ উইকেট) ৩ ফরম্যাট মিলে।
►ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২ য় টি -২০ তে ডিসেম্বরে, সাকিব তিনটি ফর্ম্যাটে কমপক্ষে পাঁচটি উইকেট শিকারী অষ্টম ক্রিকেটারট ।
►টি-টুয়েন্টি ম্যাচে অধিনায়কের সেরা বোলিং ফিগার (৫/২০) এবং একমাত্র অধিনায়ক টি-টুয়েন্টিতে পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন ।
►২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তিনি ২৫০ ওয়ানডে উইকেট অর্জনকারী এবং দ্রুততম এবং পঞ্চম খেলোয়াড় হিসাবে ৫০০০ রানের মালিক এবং মাত্র ১৯৯ ম্যাচে ওয়ানডেতে ২৫০ উইকেট শিকারকারী হয়ে ওঠেন। (অন্য ক্রিকেটার হলেন আবদুল রাজ্জাক, সনথ জয়সুরিয়া, জ্যাক ক্যালিস এবং শহীদ আফ্রিদি) ।
►সাকিব টি-টোয়েন্টিতে ৪,০০০ রান এবং ৩০০ উইকেট নিয়ে মাত্র তিন ক্রিকেটারের একজন। তিনি এই মাইলফলকটি ২৬০ ম্যাচে অর্জন করেছিলেন, দ্রুততম যে দুটি নম্বর অর্জন করেছিলেন, শহীদ আফ্রিদি (২৮৩) এবং ডোয়াইন ব্রাভো (২৯২)।
►সাকিব সবচেয়ে দ্রুত ১১,০০০ রান এবং ৫০০ উইকেট পেয়েছেন ।
►২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে, সাকিব ওয়ানডেতে ৬,০০০ রান এবং ২৫০ উইকেট এবং ডাবল অর্জনের জন্য সামগ্রিক চতুর্থ ক্রিকেটারের পক্ষে ইনিংসের দিক থেকে দ্রুততম অলরাউন্ডার হয়েছিলেন।
►আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে সাকিব বেশ কয়েকটি মাইলফলক অর্জন করেছেন।
►সাকিব বিশ্বকাপে এক হাজার রান সংগ্রহকারী প্রথম বাংলাদেশী এবং বিশ্বকাপে পাঁচ উইকেট শিকারকারী বাংলাদেশ থেকে প্রথম হয়েছেন।
►বিশ্বকাপের একমাত্র ক্রিকেটার হিসাবে তিনি এক হাজার রান করেছিলেন এবং বিশ্বকাপে ৩০ উইকেট শিকার করেছেন এবং বিশ্বকাপের একক টুর্নামেন্টে ৬০০ রান ও ১০ উইকেট শিকার করেছেন।
►যুবরাজ সিংয়ের পরে তিনি দ্বিতীয় ক্রিকেটার হয়ে ৫০ রান করেছিলেন এবং বিশ্বকাপের ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করেছেন।
►ভারতের বিপক্ষে ২০১২ বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে সাকিব বিশ্বকাপের একক টুর্নামেন্টে ৫০০ রান সংগ্রহকারী এবং ১০ উইকেট অর্জনকারী প্রথম ক্রিকেটার হয়েছেন।
►পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১২ বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে সাকিব একক বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে (৭) সর্বোচ্চ ৫০+ রানের রেকর্ড শচীন টেন্ডুলকারের সমান করে দিয়েছিলেন। এবং একক বিশ্বকাপে বিশ্বের প্রথম বাংলাদেশী এবং তৃতীয় খেলোয়াড় হয়ে ৬০০ রানের বেশি রান করেছেন।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০০৭
২০০৭ সালে তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে টাইগাররা। হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে নবীন একটি দল নিয়ে বিশ্বকাপে যায় বাংলাদেশ। দলটিতে অধিনায়ক বাশার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও মোহাম্মদ রফিকের শুধু ষাটোর্ধ্ব ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা তখন কেবল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলতে শুরু করেছিলেন। বিশ্বকাপের নবম আসরে মোট ৯টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। যারমধ্যে ৩টি জয় আসে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকে পরাজিত করে বিশ্ব ক্রিকেটে রাজ করার আগমণী বার্তা দেয় মাশরাফি-সাকিবরা।বিশ্বকাপের নবম আসর বলেছিল ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। ১৭ মার্চ নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয় টাইগাররা।মাশরাফি বিন মুর্তজা, আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ রফিকের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শক্তিশালী ভারতকে মাত্র ১৯১ রানে আটকে দিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। জবাবে দ্রুত অর্ধশতক তুলে নেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। অর্ধশতক আসে সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকেও। চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন মুশফিক।৩৮ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা হন বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি।নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যায় টাইগাররা।
তবে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে বারমুডার বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় জয় বাংলাদেশের সুপার এইট নিশ্চিত হয়। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ২১ ওভারে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ৯৪ রান সংগ্রহ করে বারমুডা। সাকিব ও আশরাফুলের ব্যাটে সহজেই এই মামুলি লক্ষ্য পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ।সুপার এইটে ইংল্যান্ড, উইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় হাবিবুল বাশারের দল। এই রাউন্ডে একটি মাত্র জয় পায় বাংলাদেশ। পরাশক্তি দক্ষিন আফ্রিকাকে ৬৭ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যেয়ে অঘটনের জন্ম দেয় বাংলাদেশ।গায়ানায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় টাইগাররা। আশরাফুলের ৮৭ রানের ঝলমলে ইনিংসে ২৫১ রান সংগ্রহ করে করে তারা। জবাবে মাত্র ১৮৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় প্রোটিয়ারা। তিন বাঁহাতি সাকিব, রফিক ও আব্দুর রাজ্জাক ৬টি উইকেট ভাগাভাগি করে নেন।২০১৫ বিশ্বকাপের আগে টাইগারদের সেরা সাফল্য অর্জন হয়েছিল এই বিশ্বকাপে।
তবে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে বারমুডার বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় জয় বাংলাদেশের সুপার এইট নিশ্চিত হয়। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ২১ ওভারে ৯ উইকেটের বিনিময়ে ৯৪ রান সংগ্রহ করে বারমুডা। সাকিব ও আশরাফুলের ব্যাটে সহজেই এই মামুলি লক্ষ্য পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ।সুপার এইটে ইংল্যান্ড, উইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় হাবিবুল বাশারের দল। এই রাউন্ডে একটি মাত্র জয় পায় বাংলাদেশ। পরাশক্তি দক্ষিন আফ্রিকাকে ৬৭ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যেয়ে অঘটনের জন্ম দেয় বাংলাদেশ।গায়ানায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় টাইগাররা। আশরাফুলের ৮৭ রানের ঝলমলে ইনিংসে ২৫১ রান সংগ্রহ করে করে তারা। জবাবে মাত্র ১৮৪ রানেই অলআউট হয়ে যায় প্রোটিয়ারা। তিন বাঁহাতি সাকিব, রফিক ও আব্দুর রাজ্জাক ৬টি উইকেট ভাগাভাগি করে নেন।২০১৫ বিশ্বকাপের আগে টাইগারদের সেরা সাফল্য অর্জন হয়েছিল এই বিশ্বকাপে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১১
উপমহাদেশের তিন দেশ ভারত, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশে যৌথভাবে আয়োজিত সেবারের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। অংশগ্রহণকারী ১৪টি দেশের অধিনায়কদের বয়স বিবেচনায় দেখা গেছে সাকিবের বয়স ২৩ বছর ৩১৯ দিন। যা অন্যান্য সকল অধিনায়কের থেকে কম। ২০১১ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপে সাকিব বাংলাদেশ কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিলেও ৬ ম্যাচ খেলে ৩ ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপে অনিন্দ্য সুন্দর কাভার ড্রাইভ, সুপার সুইপ (এই শটটির জন্য ২০১১ বিশ্বকাপে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন সাকিব) কাট শটের ফুলঝুরি দেখতে পাওয়া যায় সাকিবের ব্যাটিংয়ে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫
২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ৪ জানুয়ারি, ২০১৫ তারিখে বিসিবি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দলের ১৫-সদস্যের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে তিনিও দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন।১৮ ফেব্রুয়ারি ম্যানুকা ওভালে অনুষ্ঠিত গ্রুপ-পর্বের প্রথম খেলায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে চমকপ্রদ ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করেন সাকিব।মুশফিককে সাথে নিয়ে ১০০ রানের একটি জুটি গড়ে তোলেন যা বাংলাদেশের জয়ে ভুমিকা রাখে।প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসান একদিনের আন্তর্জাতিকে ৪,০০০ রান সংগ্রহ করেন। অর্ধ-শতকের পাশাপাশি ২ উইকেট লাভ করে বাংলাদেশ দলকে ১০৫ রানে জয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
২০১৯ সালের এপ্রিলে সাকিব ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। বিশ্বকাপের বাংলাদেশের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তিনি ও মুশফিকুর রহিম তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রানের জুটি গড়েন, যা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। বাংলাদেশ দল ৫০ ওভারে ৩৩০/৬ রান সংগ্রহ করে, যা একদিনের আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি এইডেন মার্করামের উইকেট তুলে নেন, যা তার একদিনের আন্তর্জাতিকে তার ২৫০তম উইকেট, এবং তিনি ম্যাচের সংখ্যার দিক থেকে মাত্র ১৯৯ ম্যাচ খেলে ২৫০ উইকেট নেওয়া ও ৫,০০০ রান করা দ্রুততম ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ ২১ রানে ম্যাচটি জিতে এবং সাকিব ম্যাচ সেরা ঘোষিত হন। এছাড়া এই ম্যাচে তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে২০০৭ থেকে টানা চার বিশ্বকাপে নিজ দলের উদ্বোধনী ম্যাচে অর্ধ-শতক করার রেকর্ড গড়েন।ই আসরে বাংলাদেশের পরের ম্যাচে সাকিব নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তার ব্যক্তিগত ২০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে তিনি এই আসরে টানা দ্বিতীয় অর্ধ-শতক করেন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২টি উইকেট তুলে নেন।
৮ই জুন তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে তার প্রথম এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক তুলে নেন। ১৭ই জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি দলকে জেতানো শতক তুলে নেন এবং ম্যাচ সেরা হন। এই ম্যাচে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬,০০০ রান পূর্ণ করেন।২৪শে জুন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ১,০০০ রান করার কৃতিত্ব গড়েন এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া তিনি যুবরাজ সিঙের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে ১ ম্যাচে অর্ধশত রান ও ৫ উইকেট শিকারের অধিকারী হন। ২রা জুলাই ভারতের বিপক্ষে তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৫০০ রান ও ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন। ৫ই জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে অর্ধশত রান করেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে আট ম্যাচে ৬০৬ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বকাপ সমাপ্ত করেন।এই বিশ্বকাপে তিনি ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট এর দৌড়ে এগিয়ে থাকেন।
৮ই জুন তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে তার প্রথম এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক তুলে নেন। ১৭ই জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি দলকে জেতানো শতক তুলে নেন এবং ম্যাচ সেরা হন। এই ম্যাচে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬,০০০ রান পূর্ণ করেন।২৪শে জুন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ১,০০০ রান করার কৃতিত্ব গড়েন এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া তিনি যুবরাজ সিঙের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে ১ ম্যাচে অর্ধশত রান ও ৫ উইকেট শিকারের অধিকারী হন। ২রা জুলাই ভারতের বিপক্ষে তিনি প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৫০০ রান ও ১০০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন। ৫ই জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে অর্ধশত রান করেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে আট ম্যাচে ৬০৬ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বকাপ সমাপ্ত করেন।এই বিশ্বকাপে তিনি ম্যান অফ দা টুর্নামেন্ট এর দৌড়ে এগিয়ে থাকেন।
এমসিসির সদস্যপদ
সাকিব ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটির সদস্য মনোনিত হন। মেরিলবোন ক্রিকেট ক্লাব (সংক্ষেপে এমসিসি) ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রিকেট খেলার যাবতীয় নিয়ম কানুন ও নানা পরিবর্তনসহ খেলার ভালো-মন্দ নিয়ে আইসিসিকে সুপারিশ করে এ কমিটি।এতে বিশ্বের বর্তমান ও সাবেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এবং আম্পায়াররা সদস্য মনোনিত হন। ক্রিকেটের প্রাসঙ্গিক বেশিরভাগ আলোচনা ও সুপারিশ করে এমসিসি। কমিটির সভা অনুমোদন করে আইসিসি ।
সমালোচনা-বহিষ্কার-নিষেধাজ্ঞা
মাঠে ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে সাকিব আল হাসান বিভিন্ন সময় সমলোচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সিরিজের ২য় ওডিআই চলাকালীন ড্রেসিংরুমে অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করায়, তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ ও তিন লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হয় তাকে।২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাকে জাতীয় দল থেকে ৬ মাসের জন্য ও বাংলাদেশের বাইরের ক্লাব ক্রিকেটের জন্য ২০১৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে নিষিদ্ধ করে। জাতীয় দলের কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহার সাথে দুর্ব্যবহার, মাঠে অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান দাবি করেন।যদিও এই শাস্তি দেয়ার জন্য বোর্ডকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট বিসিবির বোর্ড সভায় সাকিবের ইতিবাচক আচরণের কথা বিবেচনা করে, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুসারে সাকিব একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারবেন। সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করেন এবং প্রথম টেস্টে ৫৯ রানের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেন।সাকিব তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় শাস্তির মুখে পড়ে ২০১৯ সালে। জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও তা আইসিসি বা বিসিবিকে না জানানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দু’বছরের জন্যে আইসিসি থেকে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। সাকিব পরবর্তীতে ভুল স্বীকার করায় তা কমিয়ে ১ বছর করা হয়।
পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট বিসিবির বোর্ড সভায় সাকিবের ইতিবাচক আচরণের কথা বিবেচনা করে, নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুসারে সাকিব একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারবেন। সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করেন এবং প্রথম টেস্টে ৫৯ রানের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেন।সাকিব তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় শাস্তির মুখে পড়ে ২০১৯ সালে। জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও তা আইসিসি বা বিসিবিকে না জানানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দু’বছরের জন্যে আইসিসি থেকে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। সাকিব পরবর্তীতে ভুল স্বীকার করায় তা কমিয়ে ১ বছর করা হয়।
Share with your friends if you love our-Expose Lifestyle
No comments